চীনকে ঠেকাতে মিয়ানমারের পাশে জাপান

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। ফাইল ছবি এএফপি

মিয়ানমারের পরিবহন অবকাঠামো তৈরি ও এসএমইগুলোতে অর্থায়নের জন্য স্বল্প সুদে ৪১৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইয়েন) ঋণ দিচ্ছে জাপান।

এতে চীন থেকে জাপানের শিল্প-কারখানা সরিয়ে নেওয়া ছাড়াও, বেইজিংয়ের সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠনের লক্ষ্য থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, ঋণের অর্থের অর্ধেকের বেশি (২৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ইয়েন) ব্যবহার হবে সড়ক সেতু নির্মাণে, যা ইস্ট-ওয়েস্ট ইকোনমিক করিডোর তৈরির মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামের সংযোগ স্থাপন করবে।

গত সপ্তাহে মিয়ানমারে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইচিরো মারুয়ামা ও মিয়ানমারের পরিকল্পনা, অর্থ ও শিল্প উপমন্ত্রী মং মাং উইন এ চুক্তিতে সই করেন।

এক বিবৃতিতে জাপান সরকার জানায়, 'যেহেতু মিয়ানমারের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, তাই যোগাযোগ খাতকে এগিয়ে নিতে পূর্ব-পশ্চিম অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি জরুরি।'

পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোক্তাদের অর্থায়নেও সহায়তা করতে ঋণের অর্থ ব্যবহার হবে। কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা স্থিতিশীল ও তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ওই অর্থ ব্যবহার হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টোকিও এ অঞ্চলে তার নিজের অবস্থান তৈরির স্বার্থেই এই সহায়তা দিচ্ছে। বিনিয়োগও এর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।

টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আকিতোশি মিয়াশিতা বলেন, 'এর আগে মিয়ানমারের অর্থনীতির বিষয়ে  জাপানের আগ্রহ ও জোর উপস্থিতি ছিল। অতীতে সেখানে প্রচুর সরকারি সহায়তা করা হয়েছে।'

'কিন্তু, সেগুলো নিয়ে জাপানের ভেতরে ও বাইরে বেশ সমালোচনা হয়। কারণ, সহায়তা দেওয়া হয়েছিল সামরিক সরকারকে। চাপের মুখে জাপান সহায়তা দেওয়া বন্ধ করলেও, অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনও সেখানে কাজ করতে আগ্রহী,' যোগ করেন তিনি।

মিয়াশিতা জানান, ২০০০ সালের দিকে টোকিও মিয়ানমারকে সহায়তা দেওয়া থেকে পিছিয়ে আসে। তখন, অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে চীন মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

ডোনার ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জাপান বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এবং এশিয়ার বৃহত্তম দাতা দেশ। জাপানের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি পায় ভারত, আর দ্বিতীয় বাংলাদেশ।

২০১৯ সালে ভারতকে মোট চার দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের অর্থ দেয় জাপান। আর, বাংলাদেশকে দেয় এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। মিয়ানমার অবশ্য সে বছর জাপানের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা পায়। তবে তা ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ইরাকের চেয়ে বেশি।

'জাপানের বলয়ের বাইরে' থাকার কয়েক বছর পর, মিয়ানমার আবারও ভূ-রাজনৈতিকভাবে 'ফিরে এসেছে' বলে মনে করছেন টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয় টোকিও ক্যাম্পাসের কন্টেম্পোরারি এশিয়ান স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক রবার্ট দুজারিক।

'জাপান সরকার মিয়ানমারের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা দিতে রাজী ছিল না। কারণ, তারা আশঙ্কা করেছিল যে এতে দেশটি চীনের বলয়ে চলে যাবে।

এখানে, একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান যেমন আছে, তেমনি অন্যদিকে আছে চীন,' বলেন তিনি।

গত আগস্টে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিটসু মোতেগির মিয়ানমার সফরে দেশটির সঙ্গে টোকিওর নতুন করে যুক্ত হওয়ার চেষ্টার খবর পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় তিনি অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং মিয়ানমারকে গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে 'পূর্ণ সমর্থন' এর প্রতিশ্রুতি দেন।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তার পাশাপাশি তিনি দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপগুলোর সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিরোধের বিষয়ে আলাপ করেন।

রবার্ট দুজারিক এসব সহায়তা ও উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনায় মিয়ানমারকে জাপানের আরও কাছাকাছি আনার সুস্পষ্ট প্রয়াস হিসাবে দেখছেন। এ অঞ্চলে চীনের আগ্রাসী সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট তৈরির সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এর মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি আছে। তবে, জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অপার সম্ভাবনাও দেখছে। মিয়ানমারে এখন চীনের তুলনায় সস্তা শ্রম ছাড়াও বিশাল ভোক্তাগোষ্ঠি এবং প্রবৃদ্ধির জন্য সম্ভাবনাময়।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে চীনে জাপানি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উত্পাদন ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ থাকায়, সম্প্রতি চীন-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা ঘাটতি চলছে। জাপান সরকার তাই এখন শিল্প উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে যেতে উত্সাহিত করছে।

'শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারকে সম্ভাব্য আদর্শ স্থান হিসেবেই দেখছে,' যোগ করেন দুজারিক।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago