দুই দশকেও যে আঙিনায় দিশেহারা বাংলাদেশ
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই বাঙালি অধিনায়কের টসে শুরু টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে নজরকাড়া নৈপুণ্যের পর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ পার করেছে শৈশব, কৈশোর, পৌঁছেছে তারুণ্যে। কিন্তু সাফল্যের আলোয় রাঙা হওয়ার সুযোগ এসেছে কমই। বরং কুলীন এই সংস্করণের ভাষা বুঝতে আজও দিশেহারা দশম টেস্ট খেলুড়ে দলটি।
টেস্ট ক্রিকেটের সদস্য সংখ্যা এখন ১২। সদ্য মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে সরিয়ে রাখলে গেল ২০ বছরে বাংলাদেশের আশার জায়গা আসলে কম। কেবল জিম্বাবুয়ের চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ২০ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১১৯টি, এই সময়ে জিম্বাবুয়ে টেস্ট খেলেছে ৬৪টি। তবে বিভিন্ন কারণে জিম্বাবুয়ে কয়েকবছর নিজেরাই টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে ছিল।
এই সময়কালের হিসাব ধরলে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াই সবচেয়ে এগিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটকে ঐতিহ্যের কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বও দেয় তারা। গত দুই দশকে সর্বোচ্চ ২৫৫ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া খেলেছে ২২৪টি।
দুশোর উপরে টেস্ট খেলেছে ভারতও (২০৯)। দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে ১৯৪ ম্যাচ। পিছিয়ে নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজও (১৮৪)। পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড দুই দেশই সমান ১৬১ ম্যাচ খেলেছে এই সময়ে। তাদের থেকে অনেকখানি পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান।
বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলার সূচি না পাওয়ার সঙ্গে নিজেদের অনীহাও কম দায়ী নয়। অনেকসময়ই টেস্ট কমিয়ে টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডের দিকে মনোযোগী হতে দেখা গেছে বাংলাদেশকে।
এই ১১৯ টেস্টেও বাংলাদেশের পরিসংখ্যান যথেষ্ট বিব্রতকর। দুই দশকের পথচলায় মাত্র ১৪ টেস্টে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। ড্র করতে পেরেছে ১৬ টেস্ট। আর হেরেছে বাকি ৮৯টিতেই। যার মধ্যে আবার ৪৪টিতেই আছে ইনিংস ব্যবধানে হার। বাংলাদেশ হেরেছে নবীন টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষেও।
এই ১৪ জয়ের মধ্যে শক্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ৭ টেস্টে জিতেছে বাংলাদেশ। ৪ জয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। যার দুটি আবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে। যা নিয়ে খুব আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই।
টেস্টে বাংলাদেশের বড় তিন জয় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ঘূর্ণি পিচ বানিয়ে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে একই ধরনের উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করেছিলেন সাকিব আল হাসানরা। ২০১৮ সালে নিজেদের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে ওদের মাঠে হারানো নিয়ে নিশ্চিতভাবেই গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ।
তবে ছোট্ট এই গর্ব সরিয়ে পেছনে থাকলে প্রায় অর্ধশত ইনিংস হারের বিব্রতকর ছবির সঙ্গে নিজেদের অ্যাপ্রোচ নিয়ে মর্মপীড়া হওয়াটাই স্বাভাবিক বাংলাদেশের। টেস্ট ক্রিকেটের মূল দর্শনই লড়াই, লড়াই এবং লড়াই। কিন্তু সাদা পোশাকে বাংলাদেশের পথচলায় প্রায়ই দেখা গেছে হাল ছেড়ে দেওয়ার গান।
মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত স্কিলের পসরা মেলে ধরেছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু টেম্পারমেন্টের ঘাটতি সেইসব স্কিলকে নিয়ে যেতে পারেনি বিশ্বপর্যায়ে সমীহের জায়গায়।
এখনো একটা নির্দিষ্ট ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করতে পারেনি বাংলাদেশ। আজও বাংলাদেশ খুঁজে ফিরছে জুতসই একটি পেস আক্রমণ। টেস্ট ক্রিকেটের ভিত তৈরি করে দেবে যে প্রথম শ্রেণির কাঠামো, তা-ও ভীষণ দুর্বল অবস্থায় পড়ে আছে।
করোনাভাইরাস মহামারি না এলে চলতি বছরে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তা ভেস্তে যাওয়ায় এই সংস্করণে উন্নতির ধাপটা আরও পিছিয়ে গেছে। সামনের সময়ে টেস্ট খেলার সূচি, মানসিকতা, প্রস্তুতির উপর অনেকখানি নির্ভর করবে বাংলাদেশের আগামী।
Comments