জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সরিয়ে অনুগতদের বসাচ্ছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বেসামরিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে সেসব পদে আপাত দৃষ্টিতে অনুগতদের বসাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ছবি: এপি ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বেসামরিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে সেসব পদে আপাত দৃষ্টিতে অনুগতদের বসাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক ইসপারকে পদচ্যূত করার পর গত সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বিভাগের আরও চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইসপারের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছেন ন্যাশনাল কাউন্টারটেরোরিজম সেন্টারের পরিচালক ক্রিস্টোফার মিলার।

আজ বুধবার সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বিভাগের চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে হয় বরখাস্ত করা হয়েছে নয়তো তারা পদত্যাগ করেছেন। তারা ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণ ও গোয়েন্দা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিভাগের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেসব পদে ট্রাম্প যাদেরকে বসাচ্ছেন তাদেরকে তার অনুগত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের অনেকে আবার বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবেও চিহ্নিত। ট্রাম্পের অনুগতদের তালিকায় এমন একজন রয়েছেন যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন।

গতকাল এক জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সিএনএন’কে বলেন, ‘মনে হয়, আমাদের চাকরি শেষ হচ্ছে এমন তিক্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসপারের বরখাস্তের পর পেন্টাগনে অস্থিরতার আভাষ পাওয়া যাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে এমন বিশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেশটির নিরাপত্তাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।

যেসব শীর্ষ কর্মকর্তা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেছেন তারা প্রেসিডেন্টের আচমকা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি জানেন। কিন্তু, নির্বাচনের পর ট্রাম্প আরও চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ইসপারকে বরখাস্ত করার পর হোয়াইট হাউস এখন ইসপারের অধীনে কাজ করা সচিবদের ওপর দৃষ্টি রাখছে।

এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটি একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এখানে সবকিছুই অনিশ্চিত। মনে হচ্ছে, কোনো এক স্বৈরশাসকের অধীনে কাজ করছি।’

ট্রাম্পের অনুগত গোষ্ঠী

এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা বিভাগে নতুন করে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে বিতর্কিত ব্যক্তিও রয়েছেন। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ্যান্টোনি টাটা। তাকে আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে পেন্টাগনের নীতিনির্ধারণের কাজে নেওয়া হয়েছিল। দুই দলের বিরোধিতার কারণে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

তবে আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে অ্যান্টোনির নাম বাদ দেওয়া হলেও তাকে ‘প্রতিরক্ষা নীতি নির্ধারণে ডিপুটি আন্ডার সেক্রেটারির কাজ’ দেওয়া হচ্ছে বলে সিএনএন’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করা জেমস অ্যান্ডারসনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিদায় বার্তায় তিনি সহকর্মীদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতের বাইরে থেকে রাষ্ট্রের জন্যে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে রদবদল

শুধু জেমস অ্যান্ডরসনই নন, প্রতিরক্ষা বিভাগের গোয়েন্দা শাখার আন্ডার সেক্রেটারি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ভাইস অ্যাডমিরাল জোসেফ কেরনানকেও তার পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। তবে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি সিএনএন

প্রতিবেদন মতে, কেরনানের পদে এজরা কোহেন-ওয়াটনিককে নেওয়া হচ্ছে। তাকে ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিনি ২০১৭ সালে নিয়ম ভেঙে গোয়েন্দা তথ্য হাউস-চেয়ারম্যান নুনিকে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন।

সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন আরও জানিয়েছে, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাউন্টারটেরোরিজম বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কাশ প্যাটেলকে নুতন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিলারের চিফ অব স্টাফ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিএনএন’র প্রতিবেদন মতে, তিনিও একজন বিতর্কিত ব্যক্তি।

ডেমোক্রেটদের প্রতিক্রিয়া

ওয়াশিংটন রাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট নেতা ও হাউস আর্মড সার্ভিসেস এর চেয়ারম্যান অ্যাডাম স্মিথ গতকাল এক বার্তায় বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তরের এই সময় প্রতিরক্ষা বিভাগের উচ্চ পদে যেভাবে রদবদল হচ্ছে তা খুবই বিপদজনক।’

আরও পড়ুন:

ট্রাম্পের বিলম্বিত ক্ষমতা হস্তান্তর জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি

ট্রাম্পের পরাজয় মেনে না নেওয়াটা ‘বিব্রতকর’: বাইডেন

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago