ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকার কোনো উপায় আছে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি/এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে জো বাইডেনের জয়কে স্বীকার করেননি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংবিধানিকভাবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে থেকে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান দলের নেতৃবৃন্দ ক্ষমতায় থাকার জন্য সব রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, ‘নির্ঝঞ্ঝাটভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্প প্রশাসনের হাতেই ক্ষমতা থাকবে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ইতিমধ্যে ফেডারেল প্রসিকিউটরদের নির্বাচনের অনিয়মের তদন্ত শুরু করতে বলেছেন।

তারপরও, অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার বা সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ নেই। দ্য গার্ডিয়ান একটি বিশ্লেষণে বিষয়টি তুলে ধরেছে।

আগামী ১৪ ডিসেম্বর সব অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোটে জয়ী ইলেকটররা একত্রিত হয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে ভোট দিবেন। সে হিসেবে জো বাইডেন ২৭০ এর বেশি ইলেকটোরাল ভোট পেতে চলেছেন। মিশিগান, নেভাদা, উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া ও অ্যারিজোনায় তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ক্রমশ ব্যবধান বাড়িয়ে চলেছেন।

নির্বাচনের আগে রিপাবলিকানরা রটিয়েছিল— মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভেনিয়ার ভোটের ফল যাই হোক সেটি উপেক্ষা করে, তাদের দলীয় ইলেকটরদের নিয়োগ দেওয়া হবে। ইলেকটোরাল কলেজের একত্রিত হওয়ার দিন পর্যন্ত ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল না এলে, কংগ্রেস এর অনুমোদন দিতে পারে।

কিন্তু, কোনো অঙ্গরাজ্যে ভোট জালিয়াতির প্রমাণ না থাকায় এবং যে ব্যবধানে বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন তাতে তার জয়ের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকে না। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড হাসেন বলেন, ‘যদি দেশে আইনের শাসন চালু থাকে, তবে, আমি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকার বিষয়ে কোনও সাংবিধানিক পথ দেখছি না।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড হাসেন ইমেইল মারফত গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ভোটারদের পছন্দের বাইরে গিয়ে একটি নগ্ন ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে আইনসভা দখলের চেষ্টা করা যায়। তবে, আমি এটি প্রত্যাশা করি না।’

কোনো অঙ্গরাজ্যে ভোটারদের সুস্পষ্ট রায়কে নস্যাৎ করে, স্থানীয় আইনসভার মাধ্যমে ভোটের ফলাফল বদলে দেওয়া হলে হট্টগোল লাগার সম্ভাবনা প্রবল। ইলেকটোরাল কলেজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ট্রাম্পকে বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ ধরণের ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এতে সারা দেশে চরম প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এবং গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থেই সঙ্কটের মুখে পড়বে।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রিচার্ড পিল্ডস বলেন, ‘একে অন্ধকার সময়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। হয়তো অনেক রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ দলত্যাগ করে ফেলতে পারে। তবে, এসব শুধু কল্পনাতেই হয়।’

‘আমরা অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতিতে জনগণের রেকর্ড সংখ্যক ভোটদান দেখেছি। অত্যন্ত মসৃণ একটি নির্বাচন পরিচালনা করতে পেরেছি। কিন্তু, প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও নিশ্চিত যে প্রক্রিয়াটি ত্রুটিপূর্ণ,’ যোগ করেন তিনি।

পেনসিলভেনিয়ার সিনেটর ও শীর্ষস্থানীয় রিপাবলিকান নেতা জ্যাক করম্যান নির্বাচনের দিন বলেছিলেন যে তার দল পেনসিলভেনিয়ায় আইন মেনে চলবে। জনগণের ভোটে বিজয়ী ইলেকটররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।

এর পরও নির্বাচনের দিন থেকেই পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন থেকে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তুলে মামলা করা হচ্ছে। তবে, এই মামলাগুলোর উদ্দেশ্য নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া নয়; বরং, অনিশ্চয়তা তৈরি ও পুনরায় ভোট গণনা করে সময় ক্ষেপণ।

তবে, ফলাফল পুনরায় যাচাইয়ের জন্য প্রতিটি রাজ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানে রিপাবলিকানরা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফলাফল প্রত্যয়নে বাধা তৈরি করতে চাইছে। প্রত্যয়নের এই সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফেডারেল আইন অনুযায়ী, ফলাফল ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হতে হবে।

অধ্যাপক রিচার্ড পিল্ডস জানান, ট্রাম্প যদি এরকম কিছু আশা করে থাকেন, তবে, আইন তাতে সহায়তা করবে না।

‘অঙ্গরাজ্যগুলো ১০ দিনের মধ্যে তাদের ভোটের ফলাফল প্রত্যয়ন করবে এবং আদালতকে দিয়ে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করার কোনো কার্যকর উপায় নেই,’ যোগ করেন তিনি।

মিশিগান, উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া ও নেভাদার গভর্নর ডেমোক্র্যাটিক দলের। তারা পপুলার ভোটে স্পষ্টভাবে বাইডেনের জয় দেখছেন। ইলেকটর নির্ধারণের পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে তাদের। এরপরও বিরোধ মীমাংসা না হলে এটা কংগ্রেসের হাতে যাবে। সেখানে ইলেকটোরাল ভোটের হিসাব করা হবে।

আরেকটি আইনে আছে, ভোটের ফলাফল নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে সিনেট সভাপতি মাইক পেন্সের হাতে এই প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ যাবে। মার্কিন পার্লামেন্টের দুই কক্ষের মধ্যে ইলেকটরদের নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে সুপ্রিম কোর্টকে তখন সম্ভবত বিষয়টি সুরাহা করতে হবে।

বিরোধে যাই চলুক না কেন, সংবিধানে এ সবের চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে। ভোট গণনা চলতে থাকলেও, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট দুজনকেই ২০ জানুয়ারি দুপুরে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।

তখন পর্যন্ত যদি চূড়ান্ত ফলাফল না পাওয়া যায় তবে, কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago