নেপালকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরল বাংলাদেশ
অভিজ্ঞ তারকা নাবীব নেওয়াজ জীবনের গোল বাংলাদেশকে পাইয়ে দেয় কাঙ্ক্ষিত শুরু। এরপর উজ্জীবিত ফুটবল উপহার দিলেও প্রথমার্ধে আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি জেমি ডের দল। বিরতির পর খেলায় এসেছিল কিছুটা ছন্দপতন। কিন্তু নেপালকে সমতায় ফিরতে দেয়নি জামাল ভূঁইয়ারা। বরং শেষ দিকে বদলি ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল একক প্রচেষ্টায় দর্শনীয় এক গোল করে দুর্দান্ত জয় উপহার দেন বাংলাদেশকে।
শুক্রবার দর্শকে ভরপুর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে লম্বা সময় পর এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছে জামাল-জীবনরা।
২০১৩ ও ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুবারই ব্যবধান ছিল ২-০। সবশেষ গত বছর অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে হওয়া এসএ গেমসে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা হারে ১-০ গোলে। এই জয়ে নেপালের বিপক্ষে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে। গত জানুয়ারিতে এই মাঠেই বুরুন্ডির কাছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা হেরে গিয়েছিল। এরপর মার্চে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যায় ঘরোয়া ফুটবল।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের ফুটবল অনুরাগীদের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে দেওয়া সুযোগ রেখেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ছাড়া হয়েছিল আট হাজার টিকেট। তবে মাঠে উপস্থিত দর্শকের সংখ্যা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। সময় যতই গড়িয়েছে, ততই পূরণ হয়েছে গ্যালারির ফাঁকা জায়গাগুলো।
বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে আগেই জানিয়েছিলেন নিয়মিতদের বাইরে অনেককে পরখ করে দেখতে চান তিনি। তার কথার প্রমাণ মেলে শুরুর একাদশে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেকের স্বাদ মেলে বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও বাংলাদেশ পুলিশের ফরোয়ার্ড সুমন রেজার।
ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দশম মিনিটে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাসে মাতোয়ারা করেন জীবন। ডান প্রান্ত থেকে সাদ উদ্দিনের দারুণ ক্রস কাজে লাগান তিনি। অসামান্য দক্ষতায় ডান পায়ের ভলিতে বল জালে পাঠান আবাহনী লিমিটেডের এই স্ট্রাইকার।
২১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ প্রায় করেই ফেলেছিল স্বাগতিকরা। পায়ের কারুকাজ দেখিয়ে দূরের পোস্টে বল ফেলেছিলেন জীবন। ফাঁকায় থাকা মোহাম্মদ ইব্রাহিম মাথা ছোঁয়ালেও প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বলে চলে যায় মাঠের বাইরে।
চার মিনিট পর বাংলাদেশের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় নেপাল। দলটির মিডফিল্ডার রবিশঙ্কর পাসওয়ানের শট অবশ্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলে আক্রমণে উঠেছিল অতিথিরা। তবে তাদের ফরোয়ার্ড নাওয়ায়ুগ শ্রেষ্ঠার শট সহজেই লুফে নেন জিকো।
২৭তম মিনিটে ফের গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মিডফিল্ডার মানিক মোল্লার বুলেট গতির শট যাচ্ছিল জালের দিকে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান নেপালের গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বু। বল তার হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হয়।
৩৬তম মিনিটে সাদ-জীবনের জুটিতে নেপালকে আবার বেকায়দায় ফেলে বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে সাদের ক্রস খুঁজে নিয়েছিল জীবনকে। ভলিও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আর লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারেননি।
দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা সময় জুড়ে লড়াই চলেছে মাঝ মাঠে। বাংলাদেশ-নেপাল কেউই পরিষ্কার সুযোগ পায়নি। তবে শেষ সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে ঘরের ছেলেরা। ৭৬তম বাংলাদেশকে ব্যবধান বাড়াতে দেননি নেপাল গোলরক্ষক। ডিফেন্ডার তপু বর্মণের ফ্রি-কিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্লাভস ছোঁয়ান তিনি। এরপর বল গিয়ে লাগে ক্রসবারে।
চার মিনিট পরই অবশ্য অবসান হয় অপেক্ষার। স্কোরলাইন ২-০ করেন বসুন্ধরা তারকা সুফিল। বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে নেপালের কয়েকজনকে ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে জায়গা তৈরি করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন। এরপর ডান পায়ের বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। তাতে ফেরার উপলক্ষ রাঙানো নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে উৎসর্গ হয়েছে বাংলাদেশ-নেপালের দুটি প্রীতি ম্যাচের সিরিজ। দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচটি একই ভেন্যুতে আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।
Comments