তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক: ববিতা

‘তিনি এত বড় মাপের অভিনেতা যে বলে বোঝানো যাবে না। তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক। বিরাট বটবৃক্ষ। যার ছায়ায় বাংলা ছবি বিরাজ করতো। মানসিক শক্তি ও চলচ্চিত্রের জন্য ভালোবাসা এত বেশি ছিল যে তিনি এই করোনার মধ্যেও শুটিং করেছেন।’

‘তিনি এত বড় মাপের অভিনেতা যে বলে বোঝানো যাবে না। তিনি ছিলেন বাংলা ছবির অভিভাবক। বিরাট বটবৃক্ষ। যার ছায়ায় বাংলা ছবি বিরাজ করতো। মানসিক শক্তি ও চলচ্চিত্রের জন্য ভালোবাসা এত বেশি ছিল যে তিনি এই করোনার মধ্যেও শুটিং করেছেন।’

ওপার বাংলার প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন অভিনেত্রী ববিতা। কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। দেশের গন্ডির বাইরে সেটাই তার প্রথম সিনেমা।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ববিতা বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৪-১৫ বছর, তখন তার সঙ্গে আমি কাজ করি। তখন বাংলাদেশে আমার দুই-একটা ছবি মুক্তি পেয়েছে। একদিকে সত্যজিৎ রায়, অন্যদিকে সৌমিত্র দা। আমি তো ভয়ে-আতঙ্কে শেষ। সময়টা ১৯৭২ সাল। সেই প্রথম পাসপোর্ট করালাম। প্রথম বারের মতো বিদেশ যাব, তাও আবার অভিনয় করতে। একদিকে উত্তেজনা আরেকদিকে অজানা ভয়।’

অশনি সংকেত সিনেমার একটি দৃশ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা। ছবি: সংগৃহীত

শুটিংয়ের সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের শুটিং হবে বীরভূমে। প্রথম শটে কোনও সংলাপ নেই। আমি বাড়িতে এক বৃদ্ধ লোককে খেতে দিয়ে উঠনে ঘুমোতে দিয়েছি। সৌমিত্র দা বাড়িতে এসে দেখে আমাকে ইশারা করছে। আমি আমার বাড়ির বেড়ার আড়ালে আর সৌমিত্র দা আমাকে ইশারা করে বলছে, কে এই লোকটা? আমি ইশারায় উত্তর দিলাম আর জিব কাটলাম।’

‘শটটা হয়ে যাওয়ার পরেই সৌমিত্র দা খুব প্রশংসা করলেন। তিনি আমাকে এতটা আপন করে নিলেন যে আমি বিদেশে এসে কাজ করছি তা আর মনেই হয়নি। তিনি এতটাই আপন করে নিলেন যে মনে হলো তিনি আমার বহুদিনের চেনা।’

শুটিংয়ের একটি মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘অশনি সংকেতের শুটিং হচ্ছে বীরভূমে। ঈদের দিন শুটিং। আমার মন খারাপ, কারণ দেশে থাকলে সবার সঙ্গে আনন্দে সময় কাটাতে পারতাম। বিদেশে কাজ করছি। আমার চোখটা ছলছল। সৌমিত্র দা দেখে প্রশ্ন করলেন, কী হয়েছে? বললাম, আপনি তো জানেন আজকে ঈদ। তিনি তখন বললেন, কাজ শেষ হোক বিকেলে দেখো কী করি? শুটিং শেষে দেখি আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছে আর নানান পদের খাবার রান্না করা হয়েছে। সবাই খুব মজা করলাম। পরে আমাকে বললেন, কী, ঈদ কেমন হলো?’

সত্যজিত রায়ের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সম্পর্ক এতটা ভালো ছিল যে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়েই অনেক কিছু বুঝতে পারতেন। একটা ঘটনা বলি। একদিন শুটিংয়ের একটা সময় ট্রলিম্যান বারবার ভুল করছে। সবাইকে অবাক করে দেখলাম সৌমিত্র দা নিজেই ট্রলি ঠেলছে। আমি আর কোনও অভিনেতাকে এই কাজ করতে দেখিনি। কাজের সঙ্গে কতোটা ইনভলব থাকতেন তিনি, এই কাজ থেকে একটা ধারনা পাবেন।’

অশনি সংকেত সিনেমার একটি দৃশ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা। ছবি: সংগৃহীত

‘তিনি আরেকটা কাজ করতেন। দেখতাম তিনি প্রতিটা শটের একটা করে নোট নিতেন। কিভাবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলবেন সে ব্যাপারে এতটাই সচেতন ছিলেন।’

আনন্দের সময়গুলোর বর্ণনা দিয়ে ববিতা বলেন, ‘আমরা শুটিং শেষ করে কলকাতা ফিরছি। পুরোটা রাস্তা তিনি আমাদের মাতিয়ে রেখেছেন। ট্রেনে বসে বিভিন্ন খেলা খেলে, খাওয়া-দাওয়া করে, হৈ হুল্লোড়।’

প্রথম সিনেমার পর থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়মিতই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখনই কলকাতা যেতাম, অবশ্যই দাদার সঙ্গে দেখা করতাম। ফোনেও কথা হতো নিয়মিত। একবার অশনি সংকেত মুক্তি পাওয়ার চার-পাঁচ বছর পর কলকাতা গেলাম। দেখা করলাম সত্যজিৎ রায় ও সৌমিত্র দার সঙ্গে। দাদা বললেন, কী খবর? প্রচুর ছবিতে অভিনয় করছো নাকি? পুরস্কারও পাচ্ছো। তোমাকে দেখেই বুঝেছিলাম তুমি অনেক বড় হবে। অনেক ভালো কাজ করবে।’

‘তিনি ছিলেন আমার অভিভাবকের মতো, বন্ধুর মতো। তার মৃত্যু হয়নি। তিনি আমার হৃদয়ে থাকবেন সারাজীবন।’

আরও পড়ুন:

বাঙালির ‘কালচারাল আইকন’

তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অতি উচ্চ মানের: গৌতম ঘোষ

বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই নক্ষত্রপতনে: অপর্ণা সেন

ফেলুদা কিংবা অপু, দেবদাস হয়েই বেঁচে থাকবেন সৌমিত্র

আলোকিত শিল্পী সৌমিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago