আজ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী
কিংবদন্তি রাজনৈতিক নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন সারাদেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা ভাসানীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে।
ভাসানী পরিষদ, ভাসানী ফাউন্ডেশন, খোদা-এ-খেদমতগার এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে সন্তোষে এই মহান নেতার সমাধিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাওলানা ভাসানীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, কুরআন খতম, গণভোজ, রক্তদান কর্মসূচী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আধ্যাত্মিক গান, ভাসানীর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা ইত্যাদি।
মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছিলেন, ‘নিম্নস্তরের মানুষের প্রতি মৌখিক ভালোবাসা ও দরদ দেখিয়ে অন্তরে অশেষ ঘৃণা পোষণ করে এ উপমহাদেশের যে সব রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রের ও সমাজের উচ্চস্তরে উঠে গেছেন এবং জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কথা অবলীলায় ভুলে গেছেন, ভাসানী ছিলেন তাদের বিপরীত মেরুর মানুষ। ধীরে ধীরে যখন তিনি সমাজে উচ্চ আসন পাচ্ছিলেন, তখন তিনি কৃষকের পোশাক বর্জন করে “ভদ্রলোক” হওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি। তার চরিত্রের একটি মৌলিক ও অসামান্য তাৎপর্য এই ব্যাপারটির মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যাবে।’
স্বাধীন বাংলাদেশের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন, যে দলটি পরবর্তী সময়ে নাম বদল করে হয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি বামপন্থী রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিলেন।
মাওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী স্টাডিজের কোর্স টিচার সৈয়দ ইরফানুল বারী তার ‘অসাম্প্রদায়িকতা ও মাওলানা ভাসানী’ নামক বইয়ে লিখেছেন, ‘শেষ দিনগুলোর একদিন মাওলানা ভাসানী বললেন, এখানে কত বাতি জ্বলবে, কত লোক আসবে। সাবধান, কে কি বিশ্বাস করে আর করে না, জিজ্ঞেস করবে না। সেজন্যে কোনও তারতম্য করবে না। আরও বললেন, হাজার বছর আগে এক দরবেশ শায়খ আবুল হাসান খেরকানির মাজারে যা লেখা আছে, সেই আদর্শই এখানে পালন করবে।
হাজার বছর আগে ফার্সি ভাষায় লেখাটুকু আমরা পেয়েছি এবং মাওলানা মহানের মাজার অঙ্গনে লিখে রেখেছি। ভাষান্তরিত কথাগুলো হলো: “আমার দরগায় যে-ই আসবে তাকে রুটি দাও। তার বিশ্বাস-আচার কি তা জিজ্ঞেস করবে না। কারণ, আমার প্রভুর কাছে যার জীবনের মূল্য আছে, তার তুলনায় আমার রুটির মূল্য অত্যন্ত নগণ্য ও তুচ্ছ।”’
সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ সাধারণ মানুষের এই নেতা তার প্রায় পুরোটা জীবন নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। পেয়েছিলেন ‘মাজলুম জননেতা’ উপাধি।
ইসলামের প্রতি ভাসানীর প্রতিশ্রুতি তাকে ধর্মান্ধ করে তোলেনি। বাংলাদেশের পক্ষে অসাম্প্রদায়িক সংগ্রামে তার বিশ্বাস ছিল দ্ব্যর্থহীন।
আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দৌহিত্র আজাদ খান ভাসানী তার দাদার সম্পর্কে বলেন, ‘মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনপঞ্জি লিখতে গিয়ে দেখছি- জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি তিনি দেশ, মাটি আর মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। একটি শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক, সমতা আর পালনবাদী সমাজ ব্যবস্থার জন্য নিজের জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। মানব মুক্তির আদর্শ থেকে তিনি এক দিনের জন্যও বিচ্যুত হননি বা অবসর খোঁজেননি। জীবনের প্রায় প্রতিটি বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন তিনি আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মসূচির মধ্যেই থেকেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এত দীর্ঘকালব্যাপী ও ধারাবাহিকভাবে কেউ সক্রিয় আন্দোলন, সংগ্রাম, কর্মসূচির ভেতর থেকেছেন বলে আমার জানা নাই।’
সাধারণ মানুষের এই নেতা ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৬ বছর বয়সে মারা যান। তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে সমাধিস্থ করা হয়।
Comments