ধনেপাতা চাষে লালমনিরহাটে কৃষকের মুখে হাসি
গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি ধনেপাতার দাম ছিল ৮-১০ টাকা, এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। যদিও এক মাস আগে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এ বছর ধনেপাতা চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা।
আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের জামুটারী গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন (৬৫) জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করে ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আরও ৩-৪ হাজার টাকার ধনেপাতা বিক্রি করতে পারবেন তিনি।
‘এবার বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে ধনেপাতা ক্ষেত দুবার নষ্ট হয়েছিল। তৃতীয় বার বীজ বপন করে ফলন পেয়েছি’, বলেন তিনি।
আফজালের স্ত্রী জমিলা বেগম (৫৮) বলেন, ‘এক বিঘা জমির ধনেপাতা রক্ষার জন্য আমাদের কঠোর শ্রম দিতে হয়েছে। এক বিঘা জমি চাষে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট গ্রামের কৃষক দীনেশ চন্দ্র বর্মণ (৬০) জানান, ধনেপাতা বিক্রি করে কৃষকেরা সন্তোষজনক টাকা আয় করছেন ঠিকই কিন্তু এ বছর ধনেপাতার ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কয়েকবার।
‘এ বছর বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে সব ধরনের সবজি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি উৎপাদনে গেল বছরের চেয়ে এবার খরচ হয়েছে দ্বিগুণ’, বলেন তিনি।
একই উপজেলার ভাটিবাড়ী গ্রামের কৃষক নাজের আলী (৫৬) জানান, তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছিলেন কিন্তু ফলন পেয়েছেন ২০ শতাংশ জমি থেকে। অতিবৃষ্টিতে ৪০ শতাংশ জমির ধনেপাতা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে ধনেপাতার বাজারমূল্য উচ্চ থাকায় তারা ক্ষতি পুষিয়েও লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট শহরের সাহেবপাড়া এলাকার হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘দাম বেশি থাকায় তারা পরিমাণে কম ধনেপাতা কিনছেন। শীতকালে তরকারির সঙ্গে ধনেপাতা না থাকলে খাবারের স্বাদ কমে যায়, তাই পরিবারে ধনেপাতার চাহিদা অনেক।’
লালমনিরহাট শহরের গোশালা কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মেহের আলী জানান, তারা কৃষকের কাছ থেকে ধনেপাতা কিনে উচ্চমূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। ধনেপাতার দাম বেশি হলেও এর চাহিদা কমেনি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ জানান, এ বছর প্রায় এক হাজার ৮০০ বিঘা জমির অনেক ধনেপাতা অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে অনেক।
কৃষকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনি উচ্চমূল্যে ধনেপাতা বিক্রি করে সন্তোষজনক টাকাও পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
Comments