আমনের ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম

Lalmonirhat.jpg
ধান কেটে আঁটি বাঁধছেন লালমনিরহাটের এক কৃষক। ছবি: স্টার

আমন ধানের ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের দাম আগের মতো থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। উচ্চ মূল্যে চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বাজারে চালের দাম আদৌ কমবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন অনেকে।

আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি ঠিক রাখতে না পারায় খেটে-খাওয়া, দিনমজুরদের অনেকেই হয়ে পড়ছেন ঋণগ্রস্ত। উপার্জনের বেশিরভাগ টাকাই তাদের ব্যয় হয়ে যাচ্ছে চাল কিনতে।

বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চাল ৪৪-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত চার মাস ধরে বাজারে চালের মূল্য প্রায় একইরকম আছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ৮৫ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন।

লালমনিরহাট শহরের শহীদ শাহজাহান কলোনির রিকশাচালক জোবেদ আলী (৪৬) জানান, তারা ভেবেছিলেন আমন ধানের মৌসুমে চালের দাম কমবে, কিন্তু কমছে না। চালের মূল্য আগের মতো থাকায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

‘এখন যা আয় করছি, তার অধিকাংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে চাল কিনতে। একটু ভালো মানের চাল কিনতে গেলে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা লাগে’, বলেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রামের দিনমজুর মনসুর আলী (৫০) জানান, গত বছর এই সময়ে তিনি প্রতি কেজি চাল ৩২-৩৫ টাকা দরে কিনেছিলেন। এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ৪৪-৫৫ টাকা দরে। ধানের ভরা মৌসুমে কৃষকের ঘরে ঘরে ধান। তারপরও চালের দাম না কমায় তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর গ্রামের কৃষক সরবেশ আলী (৬৫) বলেন, ‘এ বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ধানের ফলন কম হয়েছে। দবে প্রতি মণ ধান ৯৫০-১০০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরে খুশি। গত বছর এই সময়ে প্রতি মণ ধান ৪০০-৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দশ বিঘা জমি থেকে ১০৯ মণ ধান পেয়েছি। মাত্র ১৫ মণ ধান বিক্রি করেছি ৯৮০ টাকা দরে। যদি ধানের দাম আরও বাড়ে, সেজন্য বাড়িতে ধান সংরক্ষণ করে রেখেছি।’

একই উপজেলার দোলজোড় গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র বর্মণ (৬০) জানান, গত বছর ধান বিক্রি করার কয়েকদিন পরই দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই এ বছর ধান বিক্রি করতে অপেক্ষা করছেন তিনি।

১৫ বিঘা জমি থেকে ১৪৮ মণ ধান পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষকের ঘরে এখন ভাতের অভাব নেই।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটের ধান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে কৃষকেরা প্রতি হাটে ১৬০০-২০০০ মণ ধান নিয়ে আসতেন। কিন্তু এ বছর ১৫০-২০০ মণ ধানের আমদানি দেখা যাচ্ছে।’

‘আমরা কৃষকের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে ধান কিনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। ধানের দাম কমার সম্ভাবনা নেই, তাই চালের দামও কমছে না’, বলেন তিনি।

লালমনিরহাট শহরের গোশালা বাজারের চাল বিক্রেতা বেলাল হোসেন জানান, তারা মিলারদের কাছ থেকে বেশি দমে চাল কিনছেন, তাই ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।

ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম না কমলে পরবর্তীতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মিল মালিক আহমেদ আল বলেন, ‘কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে চাইছেন না। বেশি দামে ধান কিনে চাল প্রস্তুত করায় বাজারে চালের দাম কমছে না। তাছাড়া এ বছর চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago