শেষ ওভারে ৪ ছক্কায় নায়ক আরিফুল
শেষ ওভারের আগে খেলার ফল অনেকটা যেন নির্ধারিত। ৬ বলে দরকার ২২ রান। ধুঁকতে থাকা আরিফুল হকের কাছে এতটা আশা করেনি বোধহয় দলও! মেহেদী হাসান মিরাজের ঝুলিয়ে দেওয়া বলগুলোর ফায়দা তিনি তুললেন শতভাগ। চার ছক্কায় দলকে এনে দিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে রান প্রসবা উইকেটেও কেবল ১৫২ রান করেছিল ফরচুন বরিশাল। ওই রান তাড়ায় শেষ ওভারে আরিফুল ঝলকের আগে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল না জেমকন খুলনার। তাসকিন আহমেদ, সুমন খানদের পেসে কাবু হয়ে হারের পথেই ছিল তারা। সেই ম্যাচে এক বল হাতে রেখে শেষ পর্যন্ত খুলনা জিতে গেল ৪ উইকেটে।
জোরের উপর করা মিরাজের প্রথম বলে লং অফের উপর দিয়ে উড়ান আরিফুল। পরের বলেই একই ফল। এবার বল যায় লং অনের উপর দিয়ে। মাঝের বল ডট দিয়ে পরের দুই বল মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে দেন ডানহাতি আরিফুল।
ওই ৪ ছক্কা মারার আগে ২৯ বলে আরিফুল করেছিলেন ২৪ রান। ম্যাচ শেষে তার নামের পাশে ৩৪ বলে অপরাজিত ৪৮। ৪ ছক্কা বাদ দিলে আগে আর কেবল ২ চার মেরেছিলেন তিনি। যারমধ্যে একটা আবার ব্যাটের কানায় লেগে।
শট খেলার জন্য আদর্শ উইকেটে লক্ষ্যটা ছিল বেশ নাগালের মাঝেই। শিশিরের মাঝে রান তাড়া ছিল আরও সহজ। বরং শক্ত ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধে সাদামাটা পুঁজি নিয়ে অনেকটা ব্যাকফুটে ছিল বরিশাল। এমন ম্যাচ জিততে হলে শুরুতেই দরকার উইকেট।
তাসকিন মেটান সেই দাবি। একদম প্রথম ওভারেই তুলে নেন এনামুল হক বিজয় আর ইমরুল কায়েসকে। বিজয় উড়াতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড অনে। ইমরুল গতিতে কাবু হয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
মাহমুদউল্লাহ নেমে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন। বেশি দূর যেতে পারেননি। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ১৬ বলে ১৭ রান করে বিদায় তার।
লম্বা সময় পর ক্রিকেটে ফেরা সাকিব আল হাসান বল হাতে ছিলেন বেশ ভালো। কিন্তু ব্যাটিংয়ে তাকে দেখা গেল ঠিকই জড়সড়। থিতু হতে সময় নিচ্ছিলেন। কিন্তু ফল এলো না। সুমনের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড উইকেটে। ১৩ বলে ২ চারে ১৫ রান করেন সাকিব।
৩৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে খুলনা। আরিফুলকে নিয়ে জহুরুল ইসলাম অমি বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টায় ছিলেন। প্রাথমিক পরিস্থিতি সামালও দেন তারা। কিন্তু রান রেটের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ে বিপদও। জহুরুল সেই চাপ মেটাতে গিয়ে ৩১ রান করে দেন ইস্তফা।
খুলনার আশা তখন প্রায় নিভু নিভু। সাতে নেমে তখনই আশার জোগান দেন তরুণ শামীম পাটোয়ারি। চার-ছয়ে তুলেন ঝড়। কিন্তু আরেক প্রান্তে আরিফুল মেটাতে পারছিলেন না সে দাবি। বরং ডট বলে তিনি বাড়িয়েছেন চাপ। সুমনের শেষ স্পেলে শামীম আউট হন ২৬ রান করে। এরপর খলনায়কের মঞ্চ থেকে আচমকা নায়ক বনে যান আরিফুলই।
এর আগে বরিশালের ইনিংসের একমাত্র হাইলাইট বলা যায় পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটিং। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝে উজ্জ্বল ছিল তার ব্যাট। ৪২ বলে তার ৫১ রানে ভর করেই দেড়শ ছাড়িয়ে যাওয়ার ভিত পায় বরিশাল। এই রান নিয়েও জেতার পথে থাকা তামিম ইকবালের দল হারে মিরাজের শেষ ওভারের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৫২/৯ (মিরাজ ০, তামিম ১৫, পারভেজ ৫১, আফিফ ২, হৃদয় ২৭, ইরফান ১১, মাহিদুল ২১, আমিনুল ৫, সুমন ০, তাসকিন ১২*, কামরুল ২*; শফিউল ২/২৭, আল-আমিন ০/৩২, হাসান ২/৪৫, শহিদুল ৪/১৭, সাকিব ১/১৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৮)
জেমকন খুলনা: ১৯.৫ ওভারে ১৫৫/৬ (এনামুল ৪, ইমরুল ০, সাকিব ১৫, মাহমুদউল্লাহ ১৭, জহুরুল ৩১, আরিফুল ৪৮*, শামীম ২৬, শহীদুল ৮*; তাসকিন ২/৩৩, সুমন ২/২২ , মিরাজ ১/৩৬, আমিনুল ০/২০, কামরুল ১/৩২, আফিফ ০/১২)।
ফল: জেমকন খুলনা ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আরিফুল হক।
Comments