করোনা আক্রান্ত বাবার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাননি ডা. মনীষা চক্রবর্তী

তপন চক্রবর্তী (৭৯) একজন মুক্তিযোদ্ধা, বরিশালের একজন বিখ্যাত আইনজীবী। তিনি বরিশালের বামপন্থী নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২২ নভেম্বর তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
Tapan Chaterjee.jpg
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় ঢাকা থেকে আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে তপন চক্রবর্তীকে নিয়ে রওনা দেওয়া হয়। ছবি: স্টার

তপন চক্রবর্তী (৭৯) একজন মুক্তিযোদ্ধা, বরিশালের একজন বিখ্যাত আইনজীবী। তিনি বরিশালের বামপন্থী নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২২ নভেম্বর তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

সেখানে শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রয়োজন হলে চেষ্টা করেও কোনো প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পাওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাফ জানিয়ে দেয়, কোনো কোভিড রোগীকে তারা পরিবহন করেন না। 

প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষকে কোভিড যাত্রী না নিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিয়েছে বলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে অভিযোগ করেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। এখানে তার অবস্থার অবনতি হয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩ থেকে কমতে শুরু করলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করেও কোনো আইসিইউ বেড পাওয়া যায়নি। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে গত মঙ্গলবার থেকে ৪/৫টি প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা অপারগতা প্রকাশ করে। এ ছাড়া, সরকারি নির্দেশে ডিজি হেলথের অনুমতি নিয়ে ভিআইপিদের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও, তারা ভিআইপি ছাড়া অন্য কাউকে পরিবহন করে না।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে প্রাইভেট আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন কোম্পানি আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কোভিড রোগী পরিবহন না করতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। উপায়ন্তর না দেখে ৭০ হাজার টাকায় আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা থেকে আনিয়ে আজ বিকালে রওনা দিয়েছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কোভিডে আক্রান্ত সিরিয়াস রোগীরা তাহলে কীভাবে উন্নত চিকিৎসা নেবে? প্রয়োজনের সময় তাদের ঢাকায় যাওয়া যখন জরুরি, কী হবে তখন?’

‘আইসিইউ নেই, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও করোনা রোগী পরিবহন করবে না, আমরা বাঁচব কীভাবে’, বলেন মনীষা।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের পরিচালক জানান, বরিশালে আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেই।

প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন’র ম্যানেজার মো. পারভেজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা কোভিড যাত্রী পরিবহন করি না। এটি করে এয়ারফোর্স। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের না নেওয়ার নির্দেশনা আছে।’

কনসাস আইসিইউ’র প্রধান নির্বাহী মো. বাশার জানান, বরিশাল থেকে এয়ারে ঢাকায় যেতে তারা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগী পরিবহন করা যাবে না, এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ধরনের রোগী পরিবহন করার ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটি বলা হয়েছে। যারা পরিবহন করতে অস্বীকার করেছে, তাদের বলুন- এ ধরনের নির্দেশনা থাকলে যেন আপনাদের দেখায়?’

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস জানায়, এ বিভাগে করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৬৩৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের। অক্টোবর মাসে আক্রান্তের হার ১৩ দশমিক ৪৭ হলেও, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস জানান, আগের চেয়ে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

জরুরি পরিস্থিতিতে দুর্গম এলাকার জন্য হেলিকপ্টার সুবিধার দাবি করেছেন সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শাহ সাজেদা।

তিনি বলেন, ‘হেলিকপ্টার সেবা বন্ধ হয়ে গেলে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago