অর্থ কি শুধু কানাডাতেই পাচার হয়
‘লুটেরাবিরোধী মঞ্চ, কানাডা’ পাতায় বাংলাদেশের অর্থসম্পদ লুটপাট ও পাচার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আমরা নানা ধরনের সংবাদ-প্রতিবেদন-মতামত শেয়ার করছি। বৈশ্বিক দুর্যোগেও দেশে লুটপাট-পাচার থেমে নেই। পত্রিকার মাধ্যমে তার কিছু কিছু সংবাদ আমরা জানতে পারছি। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু কথাবার্তাও কথা শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি কানাডায় অর্থপাচার নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এ আলোচনাকে সামনে নিয়ে এসেছে।
অর্থ কি শুধু কানাডাতেই পাচার হয়?
অর্থসম্পদ লুটপাট ও পাচার গোপন কোনো বিষয় নয়। প্রশ্ন উঠেছে কে, কারা কোথায়, কোন দেশে, কি পরিমাণ অর্থ পাচার করছে সে হিসেব নিয়ে। এ নিয়ে বাংলাদেশে যেহেতু সুনির্দিষ্ট সমন্বিত কোনো তদন্ত, গবেষণা নেই, সে কারণে অনেকে অন্ধের হাতি দেখার মতো করে সে তথ্য-প্রকাশ করছেন। যার অনেকটা অনুমানভিত্তিক ও হুজুগে। কেন বলছি এমন কথা?
অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে সবার নজর পড়ে কানাডার দিকে। কানাডা অবশ্যই লুটেরাদের অর্থ পাচারের একটি আলোচিত গন্তব্য। কিন্তু, বিষয়টা এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেন কানাডাই একমাত্র লুটের মাল চালানের জায়গা। আর কানাডার সরকার দিল খুলে এদের জন্য বসে আছেন, এদের স্বাগত জানাচ্ছেন। বিষয়টি কি আসলে তাই?
বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসনের দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে অসাধু লোকেরা নানা কৌশলে অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে। সে অর্থ শুধু কানাডায় নয়, অন্য দেশেও যায়, সে তথ্য সরকারি নথি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণাতেও আছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রধানত ১০টি দেশে এ অর্থ যায়। ১. যুক্তরাষ্ট্র ২. যুক্তরাজ্য ৩. কানাডা ৪. অস্ট্রেলিয়া ৫. সিঙ্গাপুর ৬. হংকং ৭. সংযুক্ত আরব আমিরাত ৮. মালয়েশিয়া ৯. কেইম্যান আইল্যান্ডস ও ১০. ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস। এ তথ্য বাংলাদেশ সরকার ও জিএফআই’র, আমার মন গড়া নয়।
তাহলে বার বার কেন কানাডার নাম আসে?
কানাডাই একমাত্র দেশ যেখানে দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা এ বছরের শুরুতে লুটেরাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে। যে সংবাদ দেশের সব মিডিয়াতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। এবং দেশ-বিদেশের বাঙালিদের কাছে ব্যাপক প্রশংশিত হয়। তাদের মধ্যে অনেক উৎসাহের সৃষ্টি করে। অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেখানে এমন আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। বিশেষত যে সব দেশে লুটেরারা অর্থ পাচার করে। সেটা হলে লুটেরাবিরোধী আন্দোলন হয়তো একটি বৈশ্বিক রূপ পেত। কিন্তু, দুর্ভাগ্য বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়ঙ্কর প্রভাব সে সম্ভবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু, লুটেরাবিরোধী আন্দোলনের আলাপ-সংগ্রাম থেমে নেই।
কানাডায় লুটেরাবিরোধী আন্দোলনই কি এই অপবাদের মূল কারণ? কেউ কেউ বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে কানাডা বাংলাদেশের চোর-ডাকাতে ভরে গেছে। ইচ্ছে করলেই যেন খুন-ধর্ষণ-লুটপাট করে কানাডাতে টাকার জোড়ে এসে সহজেই আশ্রয় নিতে পারেন। বিষয়টি আসলে এমন নয়।
কানাডা একটি সভ্য দেশ-সমাজ। এখানে আইনের শাসন আছে। আইন মেনেই সব কিছু করতে হয়। যা কিছু অন্যায়-অনৈতিক কাজ-কারবার হয়, তা আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশ হয়ে বৈধতার আবরণে আসে। কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার মা’র উই ফাউন্ডেশেনের ঘটনায় এক মহাবিব্রতকর অবস্থায় আছেন। ক্ষমতা যায় যায় অবস্থা। দুঃখপ্রকাশ করে, ক্ষমা চেয়ে, জরিমানা দিয়েও রক্ষা পাচ্ছেন না। আর এ সব লুটেরাতো কোন ছাড়? সুতরাং কানাডা’র বেগমপাড়ার মিথ ও লুটেরাবিরোধী আন্দোলনই যদি এই একমুখী ভাবনার কারণ-সমীকরণ হয়, তাহলে সেটা খুব দুঃখজনক।
আমরা কেন এ আন্দোলন করেছি?
বিবেকের দায় থেকে আমরা লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। এরা যেমন দেশের ক্ষতি করছে, একই সঙ্গে সেই চোরাই অর্থ এনে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করছে ও কমিউনিটিতে বিভেদ সৃষ্টি করছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সেই সংগ্রাম ছিল দেশপ্রেমিকের কর্তব্য।
কানাডায় লুটেরাবিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল— দেশ থেকে যারা অর্থ পাচার করে এখানে নিরাপদ জীবনযাপন করতে চেয়েছেন, তাদেরকে এই বার্তা দিয়েছি, কানাডায় তাদের জীবন সুখের ও নিরাপদ হবে না। এ সব টাকা চোররা কানাডাতে মাথা উঁচু করে চলতে পারবে না। বাঙালি কমিউনিটিতে তাদের কোনো মাতব্বরি চলবে না। তাদের এখানে স্থান হবে না। এর অনেকটাই আমরা করতে পেরেছি।
পাচারকারীদের নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য আন্দোলনের নৈতিক জয়।
আন্দোলনের সময় সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ ছিল লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু, সে সময় তাদের পক্ষ থেকে আমরা কোনো আশ্বাস ও উদ্যোগ দেখিনি। কানাডা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও বিষয়টি নিয়ে কিছু কিছু যোগাযোগ হয়েছিল, তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি, কানাডার ফেডারেল সংস্থা ফিনট্র্যাক (The Financial Transactions and Reports Analysis Centre of Canada (FINTRAC) গত এক বছরে অর্থ পাচারের ১ হাজার ৫৮২টি সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য কানাডার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস ও আরসিএমপির কাছে হস্তান্তর করেছে। এমন সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা না, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশিদের বিষয়ে গোপনে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু, আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারির বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন। এ ছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। তবে পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। (প্রথম আলো, ২২ নভেম্বর ২০২০)
কানাডা সরকারের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কোনো সমীকরণ আছে কি না তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
পাচার কারা বেশী করেন? ব্যবসায়ী, রাজনীতিক না চাকুরে— তা তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে। কিন্তু, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কারো পক্ষেই এ কাজ করা সম্ভব না। যে কারণেই হোক সরকারের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা বিষয়টি নিয়ে সামান্য তৎপর। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে গঠিত কমিটির মাধ্যমে যে সুপারিশ করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সাধুবাদ জানাই।
এবার টাকা পাচারের কয়েকটি গন্তব্যের কথা জানা যাক।
১. বাংলাদেশের একটি আলোচিত গ্রুপ সিঙ্গাপুরে ৭৮৬ কোটি টাকা ও এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় দুইটি হোটেল কিনেছিল ২০১৬ ও ২০১৪ সালে।
এই নিয়ে প্রথম রিপোর্ট বেরিয়েছিল সিঙ্গাপুরের ফাইন্যান্সিয়াল নিউজ পেপারেই- যদিও দেশের মূলধারার পত্রিকাগুলো এ সংবাদ প্রকাশ করেনি। কিন্তু, সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল। বাংলাদেশের ফরেন এক্সচেঞ্জ আইনে বিদেশে বিনিয়োগ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পত্রিকার অনুসন্ধানে জানিয়েছিল এই বিনিয়োগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। তার মানে এই হোটেল দুইটির ক্রয় পরিষ্কারভাবে টাকা পাচারের মাধ্যমে ঘটেছিল। কিন্তু, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের এই ঘটনায় সরকারকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
২. ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ২২৭ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দেশের গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৩. এ বছর ২১ আগস্ট দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহামুদ শামীমকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গ্রেপ্তার করেছে। একই জেলার দুই হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জন ও পাচারের অপরাধে গত ২৬ জুন শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে ঢাকার কাফরুল থানায় সিআইডি মামলা করেছে।
৪. অর্থপাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা যেসব দেশে বাড়ি করেছেন, সেসব দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। মালয়েশিয়া সরকারের ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা, রাজনীতিবিদসহ কয়েক হাজার নাগরিক নাম লিখিয়েছেন।
‘সেকেন্ড হোম’র বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে প্রকৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ১৪ থেকে ১৫ হাজারের মতো। তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে অনেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন স্থানীয় কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে। সেখানে কয়েক হাজার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা গড়ে তুলেছেন।
ওই দেশে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাঁচতারা হোটেল ব্যবসা, গার্মেন্টস কারখানা, ওষুধ শিল্পসহ নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। অনেকে রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ বড় বড় শপিং মলে দোকানও কিনেছেন। এসব সংবাদ মাঝে মধ্যেই দেশের গণমাধ্যমে আলোচিত হয়।
৫. ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে কার্যক্রম শুরু করে কয়ি রিসোর্ট অ্যান্ড রেসিডেন্স। যেটি পরিচালনা করছে বিশ্বখ্যাত হিলটন কর্তৃপক্ষ। এই কয়ি রিসোর্টের কর্ণধার বাংলাদেশের সিকদার পরিবার। সিকদার পরিবারের মালিকানাধীন কয়ি রেস্টুরেন্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদ নগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি ও বিপুল বিনিয়োগ। এমনকি, টেলিভিশন চ্যানেলও রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্য একজন রপ্তানিকারক ব্যবসা বাড়াতে অন্য দেশে লিয়াজোঁ অফিস খোলা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য বছরে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এর মধ্যে সিকদার গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। অনুমোদন ছাড়া কেউ দেশের বাইরে টাকা নিলে অর্থ পাচারের অপরাধ। (প্রথম আলো ৯ জুন ২০২০)
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ২০ বার অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, জরিমানাসহ ১৮ হাজার কোটি টাকার অধিক বৈধ হয়নি। যা বিদ্যমান অবৈধ অর্থের তুলনায় খুব সামান্য। তাহলে সেই বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ কোথায় যায়? সেই অর্থও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়ে চলে যায়।
২০০৪ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৩৬৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের হিসেবে অনুযায়ী এখন সেখানে আছে ৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ বেড়েছে এক হাজার ৩৭০ গুণ! বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই অবৈধ অর্থের চালান শুধু কানাডায় নয় পাচারকারীর সুবিধা অনুযায়ী তা বিভিন্ন দেশে চলে যায়। লুটেরাদের দ্বিতীয় আবাসভূমির ‘বেগমপাড়া’ শুধু কানাডাতেই নয় এসব দেশেও আছে!
জানার বাইরে যে পাচার অজানা—
অর্থ পাচারবিষয়ক আইন লঙ্ঘন করায় রেকর্ড জরিমানা গুনতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ব্যাংক ওয়েস্টপ্যাককে। আইন লঙ্ঘন করায় ব্যাংকটিকে গুনতে হবে ৯০ কোটি মার্কিন ডলার।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বছর অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক অপরাধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, ব্যাংকটি ১ কোটি ৯০ লাখ আন্তর্জাতিক লেনদেনের বিষয়ে যথাযথ প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। বুঝতে পারছেন কি বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থের চালান যায় অস্ট্রেলিয়াতে।
বিভিন্ন দেশের অবৈধ অর্থের লেনদেন ও পাচার নিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) কাজ করছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। ২০০৮ থেকে এ অর্থ পাচার হচ্ছে এবং তা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বলছে, ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। আর সম্পদ পাচারের প্রাপ্ত তথ্যের বাইরের সে হিসেবে আমাদের অজানা।
ড. মঞ্জুরে খোদা, কানাডাপ্রবাসী লেখক, গবেষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)
Comments