‘ট্রাম্পের মদদে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা’, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়বেলায় ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদাহ হত্যার ঘটনায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়বেলায় ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদাহ হত্যার ঘটনায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, পূর্বসূরি ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে হওয়া আলোচিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি আবারও চালু করার বিষয়ে জো বাইডেন যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা এই হত্যাকাণ্ডের পর জটিল হয়ে উঠবে।

এ ঘটনায় ইরান ও এর বিরোধী দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে সংঘাত তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।

শুক্রবার রাজধানী তেহরানের দামাবন্দ এলাকায় আততায়ী হামলায় নিহত হন মোহসেন ফখরিজাদাহ।

এ ঘটনায় ইসরায়েলের ‘বড় ধরনের সংযোগ’ রয়েছে বলে মনে করছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। বিদায়ের আগে ট্রাম্পের মদদেই ইসরায়েল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তেহরান।

ফখরিজাদাহ হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে কঠিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেহগান।

শনিবার এক টুইটে তিনি বলেন, ‘তাদের মিত্রের (ট্রাম্প) রাজনৈতিক জীবনের শেষ দিনগুলোতে জায়নিস্টরা ইরানের উপর আরও চাপ বাড়াতে চায় ও একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের চেষ্টা চালাতে চায়।’

গত চার বছরে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীতিতে জড়িয়ে পড়েন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে তিনি ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন। পাশাপাশি, ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন।

গত ৩ জানুয়ারি মার্কিন সেনারা ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করে। তিনি ইরানের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত বিপ্লবী গার্ড করপোরেশনের (আইআরজিসি) ‘কুদস বাহিনী’র প্রধান ছিলেন। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।

নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা ছিল, বাইডেন প্রশাসনকে কঠিন চাপে ফেলতে শেষ সময়ে ইরানের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারেন ট্রাম্প।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়, ক্ষমতা হস্তান্তরের দুই মাস আগে ইরানের মূল পারমাণবিক সাইটে হামলা চালানোর ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওভাল অফিসের এক বৈঠকে ইরানে আক্রমণ চালানোর সুযোগ আছে কিনা এ নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। বৈঠকে ট্রাম্পের সহযোগীরা তাকে ব্যাপক সংঘর্ষের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ইরান আক্রমণের পরিকল্পনায় অগ্রসর না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

এদিকে, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ফেরার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি।

বাইডেনের প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত আগস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমেরিকা ইরানের সঙ্গে নতুন করে পারমাণবিক চুক্তি করতে পারে, যা ‘আরও শক্তিশালী’ হবে বলে আশা করেন তিনি।

ওয়াশিংটনের কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি আলজাজিরাকে বলেন, ‘এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন জো বাইডেন। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ইরানের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

পারসি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাওয়ার আগেই ইরান যদি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ইসরায়েল বা স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই এইরকম কিছু করে বসে তাহলে...... একবার কল্পনা করুন, এর প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা আলোচনায় বসতে কতটুকু আগ্রহী হবে?’

তার মতে, এই হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর পক্ষে এক ধরনের ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, ‘ইরান যদি এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় তবে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনকে একটি সামরিক দ্বন্দ্বের দিকে টেনে আনতে পারেন, চুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন। অন্যদিকে ইরান যদি প্রতিরোধ করে, তবুও এই পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠবে, যা আদতে নেতানিয়াহুর পক্ষে সুবিধাজনক।’

আলজাজিরা জানায়, ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদাহ হত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ট্রান্সজিশন টিমও কোনো মন্তব্য করেনি। পাশাপাশি, হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও (সিআইএ) এ ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

অন্যদিকে, ইরানের এলিট ফোর্স ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ড করপোরেশনের (আইআরজিসি) একটি সূত্র আলজাজিরা জানিয়েছে, এ ঘটনায় দেশটির শীর্ষ সুরক্ষা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল সিনিয়র সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে একটি জরুরি সভা ডেকেছে।

আরও পড়ুন--

‘দায়ী ইসরায়েল’ পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার কঠিন প্রতিশোধ নেবে ইরান

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

7m ago