২টি কিডনি কেটে ফেলায় রোগীর মৃত্যু

বিএসএমএমইউ’র ৪ চিকিৎসককে খুঁজছে পুলিশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রোপচারের সময় দুটি কিডনি কেটে ফেলায় রওশন আরা নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আজ শনিবার বিকালে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
BSMMU logo
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রোপচারের সময় দুটি কিডনি কেটে ফেলায় রওশন আরা নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আজ শনিবার বিকালে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী রোগী ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক মো. রফিক সিকদার বাদী হয়ে গতকাল দণ্ডবিধির ৩০২ ও ২০১ ধারায় শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৪৩। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন, মো. মোস্তফা কামাল ও আল মামুনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ২৭ জুন দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে রওশন আরা বাম কিডনিতে ব্যথা অনুভব করেন। প্রথমে তাকে মিরপুরের বিআইএইচএস হাসপাতালে ডা. মো. ইউসুফ আলীর অধীনে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পর দিন জানা যায়, তার বাম কিডনি আক্রান্ত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ডা. ইউসুফ ১ জুলাই রোগীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।

ওইদিন রওশন আরাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৩১৩ নম্বর কক্ষে অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলালের অধীনে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে শরীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ১৫ জুলাই তিনি ছাড়পত্র পান। চিকিৎসকের পরামর্শে বাংলাদেশ পরামাণু শক্তি কমিশন থেকে একটি পরীক্ষার ফলাফলে ১২ আগস্ট দেখা যায়, রওশন আরার ডান কিডনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে।

বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক সৈয়দ সুলতান ২৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে রফিক সিকদারকে হাসপাতালে আসতে বলেন এবং বেড ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অস্ত্রোপচারের তারিখ ঠিক করার পরামর্শ দেন। ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল ৫ সেপ্টেম্বর আক্রান্ত বাম কিডনি অপসারণের তারিখ নির্ধারণ করেন। তার আগে পরীক্ষা করে দেখা যায়, রওশন আরার ডান কিডনি সচল রয়েছে।

ওই দিন অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন, মো. মোস্তফা কামাল ও আল মামুন প্রায় তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন। রাতে রওশন আরার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, অস্ত্রোপচারের পর থেকে তার ভালো কিডনিও কাজ করছে না। হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নিতে হবে। ভোরে রওশন আরাকে মগবাজারে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডান কিডনি কেন কাজ করছে না জানতে ৭ সেপ্টেম্বর ল্যাব এইড হাসপাতালে পরীক্ষা করানো হয়। পরদিন ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ফখরুল ইসলাম বলেন, রওশন আরা একটি কিডনিও নেই।

আবারও রওশন আরাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। ডা. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রিপোর্ট বা অন্যের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না, আপনার মা সুস্থ হয়ে যাবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর রওশন আরাকে বিআরবি হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সামাদের অধীনে ভর্তি করা হয়। তিনি কিছু পরীক্ষা করতে দেন এবং রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বলেন, রোগীর কোনো কিডনি দেখা যাচ্ছে না।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে অস্ত্রোপচারের সময় অসৎ উদ্দেশ্যে রওশন আরার দুটি কিডনি অপসারণ করা হয়েছে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ২০ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমান সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে রওশন আরার ডান কিডনিটিও অকেজো হয়ে গেছে। যে কারণে রিপোর্টে আসছে না। আরেকটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ছয় সপ্তাহ পরে কিডনি ভিজিবল হতে পারে। রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। ১ অক্টোবর হাবিবুর রহমান দুলাল চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে রফিক সিকদারের সঙ্গে চুক্তি করেন। সেখানে তিনি ভালো কিডনি অপসারণের দায় স্বীকার করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, একটি নতুন কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন এবং যাবতীয় খরচ বহন করবেন। রফিক সিকদারের খালা জায়েদা বেগন কিডনি দিতে রাজি হলেও তিনি আর কোনো উদ্যোগ নেননি। ৩১ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে রওশন আরা মারা যান। পরদিন রফিক সিকদার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। জিডি নম্বর ৫৩।

পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে দেরি হওয়ায় মামলা দায়ের করতে দেরি হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুটি কিডনি অপসারণ করায় সব অঙ্গ অকেজো হয়ে রওশন আরার মৃত্যু হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

7m ago