কলাপাড়ায় ৬০ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিকে মাত্র ৬০ টাকায় মিলছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা। উপজেলার নয়ামিশ্রিপাড়া, কুয়াকাটাসহ আশেপাশের গ্রামগুলো অজপাড়াগাঁ হলেও, এসব গ্রামের মানুষেরা এখানে এসে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা।
কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকার অসহায়, গরীব মানুষের পাশাপাশি স্বচ্ছল লোকজনও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে ছুটে আসছেন ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিকে। মেডিসিন ছাড়াও এখানে আছে চোখ ও দাঁতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
এটি মূলত একটি আশ্রয়কেন্দ্র। ঝড়, বন্যাসহ দুর্যোগের সময় এলাকাবাসী দুইতলা এই ভবনে আশ্রয় নিতে পারেন। লুক্সেমবার্গ সরকারের সহায়তায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এটি ২০১৮ সালে নির্মিত হয়।
পুনামাপাড়া এলাকা থেকে আব্দুল করিম (৮৫) এ ক্লিনিকে এসেছেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগের চিকিৎসা নিতে। জ্বর, বুকে ব্যথা, হাত-পা জ্বালাতনসহ কয়েকটি রোগে ভুগছেন অনেকদিন ধরে। মাত্র ৬০ টাকা নির্ধারিত ফি দিয়ে তিনি সেবা পেলেন এখান থেকে। তিনটি টেস্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রসহ তার মোট খরচ হয়েছে ৪৪০ টাকা।
আব্দুল করিম বলেন, 'কম খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে এর আগেও আমি এখানে এসেছি। কলাপাড়া শহরে যাতায়াত করতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এমনিতেই খরচ হয়ে যায়। তাই এখান থেকে স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে পেরে আমি খুশি।’
ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কুয়াকাটা এলাকার মিনারা বেগম (৪৫) বলেন, 'আমি কয়েকদিন ধরে জ্বর আর কোমর ব্যথায় ভুগছি। এখানে কম খরচে চিকিৎসা নেওয়া যায়, এমন খবর পেয়ে এসেছি। সত্যিই এখানে কম খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এটা আমাদের জন্য খুব ভালো হয়েছে।'
চক্ষু রোগের চিকিৎসা নিতে আসা তুলাতলী গ্রামের আব্দুল হাই (৫৫) বলেন, 'আমি এখানে চোখের চিকিৎসা নিতে এসেছি। আগেও এখান থেকে ওষুধ নিয়ে সুস্থ হয়েছি। টেস্ট করাতেও খরচ কম।'
শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ মো. নাকিব উদ্দিন জানান, প্রত্যন্ত এলাকার অসহায়, গরিবসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ফ্রেন্ডশিপ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নয়ামিশ্রিপাড়া এলাকায় এ হেলথ ক্লিনিকটি চালু হয়। মেডিসিন, চক্ষু ও ডেন্টাল এ তিন বিভাগ নিয়ে এ ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। শুকনা মৌসুমে দৈনিক ১০০ জন রোগীও এখান থেকে সেবা নিয়ে থাকেন।
শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, চর্ম ও যৌন, গাইনিসহ নানা রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে মেডিকেল টেস্টও করা হয় বলে জানান তিনি।
এছাড়াও সব ধরনের ওষুধ সাত শতাংশ কম দামে এখানকার প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রি করা হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছয় হাজার ১৫৭ জন নারী ও শিশুসহ মোট ১০ হাজার ৪৩ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন, জানান তিনি।
ফ্রেন্ডশিপ সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুয়েল হাসান জানান, স্বল্প আয়ের মানুষসহ সব ধরনের রোগীরা এখান থেকে সেবা নিচ্ছেন। তুলনামূলক কম খরচে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকায় এখানে রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'রোগীরাও সেবা নিতে পেরে যেমন খুশি, তেমনি আমরাও তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পেরে খুশি।'
ক্লিনিকের সেবার মান ও পরিধি ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Comments