প্রবাসে

দক্ষিণ কোরিয়ায় যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে সাম্প্রতিক অলোচনা দেখে মনে হলো এখন যেখানে আছি সেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে দুটো কথা বলি। শিক্ষা, গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, লেখাপড়ায় একটা দেশ কতটা এগিয়ে থাকতে পারে তার প্রমাণ দক্ষিণ কোরিয়া। এই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ভর্তি পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয় সৃজনশীল।
ফাইল ফটো এএফপি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে সাম্প্রতিক অলোচনা দেখে মনে হলো এখন যেখানে আছি সেই দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে দুটো কথা বলি। শিক্ষা, গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, লেখাপড়ায় একটা দেশ কতটা এগিয়ে থাকতে পারে তার প্রমাণ দক্ষিণ কোরিয়া। এই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ভর্তি পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয় সৃজনশীল।

কোরিয়ান ভাষায় একে বলা হয় সুয়িয়ং। ইংরেজিতে বলে কলেজ অব স্কলাসটিক এবিলিটি (সিস্যাট)। এটি এমন একটি পরীক্ষা যেখানে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট স্কোর অর্জন করতে পারলে সেই স্কোরের উপর ভিত্তি করে নিজের যোগ্যতামতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সক্ষমতা অর্জন করে। আট ঘণ্টা ধরে চলা এই পরীক্ষা এদেশের শিক্ষার্থীদের জীবনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এটি তাদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার খুলে দেয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষা প্রতিবছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এই ভর্তি পরীক্ষাটি দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় জীবনে অন্যরকম প্রভাব নিয়ে আসে। দিনটিকে কেন্দ্র করে সুশৃঙ্খল দেশটিকে ট্রাফিক ব্যবস্থা পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে হয় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোকে যানজটমুক্ত রাখার জন্য। একমাত্র এই দিন, যেদিন পুরো কোরিয়াতে এই ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এক অদ্ভুত নিরবতা নেমে আসে।

কোরিয়ায় ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি নেই। কাজকেই এরা ইবাদত বানিয়েছে। অথচ পরীক্ষার দিন দেখা যায় ঈশ্বরের কাছে সন্তানের সাফল্য কামনায় অনেক অভিভাবকই মন্দির কিংবা চার্চে প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছেন। পরীক্ষার একমাস পরে প্রকাশিত হয় ফল।

আগেই বলেছি, শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও শিক্ষা গবেষণায় বিনিয়োগে দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর অন্যতম। কেন্দ্রীয় সিস্টেমের এই ভর্তি পরীক্ষা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য কোরিয়ান সরকার যেসব পদক্ষেপ নেয় তা দারুণ কৌতুহলদ্দীপক।

পরীক্ষা সামনে রেখে প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর মাসে পুরো কোরিয়া থেকে বিশেষভাবে বাছাই করা ৫০০ জন শিক্ষককে একটি গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজনের থেকে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় তাদের। তারা এই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির কাজে থাকেন। পরীক্ষার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ। ভর্তি পরীক্ষা শতভাগ স্বচ্ছ রাখা তাদের কাছে পবিত্র দায়িত্ব।

ভর্তি পরীক্ষা হয় ৫০০ নম্বরের। দারুণ ধৈর্য্য, মেধা ও সমস্যা সমাধানের জন্য দারুণ এই ভর্তি পরীক্ষা। আট ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা চলে। কোরিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতি, গণিত ও ইংরেজিকে বাধ্যতামূলক কিংবা আবশ্যিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে এই পরীক্ষায়। সাথে সোশাল স্টাডিজ, সায়েন্স ও ভোকেশনাল নামে তিনটি সাব ক্যাটেগরি আছে। এইসব সাব ক্যাটেগরির অন্তর্ভুক্ত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হয়।

কেন্দ্রীয় এই পরীক্ষায় কেউ প্রথমবারেই পাস করে পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন আবার কেউ ৪/৫ বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর সফল হন। প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবারই লক্ষ্য থাকে যা তাদের উচ্চশিক্ষার অনেককিছুই নির্ধারণ করে দেয়। স্কুল ও কলেজ জীবনের পুরো ১২ বছরের সাধনার পূর্ণতা দান করে এই ভর্তিপরীক্ষা কিংবা CSAT কিংবা সুয়িয়ং।

বাংলাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে CSAT হতে পারে দারুণ এক উদাহরণ। যথার্থভাবে উপযুক্ত একটি ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের স্কোরভিত্তিক যোগ্যতা অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে। তাতে বন্ধ হবে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াতের ঝামেলা। তবে প্রথম শর্ত এমন একটা পরীক্ষাকে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত রাখা। সারা পৃথিবী যখন শিক্ষা নিয়ে নানা সব উদ্যোগ নিচ্ছে তখন বাংলাদেশ কেন এসব ভাবে না সেটাই প্রশ্ন।

(লেখক: বিকাশ রায়, পিএইচডি গবেষক, দক্ষিণ কোরিয়া। সহকারী অধ্যাপক, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর)

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

7m ago