‘ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীকে দূর-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয়েছিল’
ইরানের প্রধান পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে দূর-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয়েছিল বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফারস নিউজ এজেন্সি।
গতকাল প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে আজ সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার তেহরানের পূর্বে একটি গাড়ি থেকে দূর নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে মোহসেনকে গুলি করার কথা জানিয়েছে ফারস।
তবে মোহসেন হত্যার বিষয়ে ফারসের এই সংবাদের সঙ্গে দেশটির অন্য সংবাদ সংস্থাগুলোর দেওয়া সংবাদের মিল নেই বলেও সিএনএন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফারসের সংবাদে বলা হয়েছে, শুক্রবার মোহসেন তার স্ত্রী ও তিন ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীকে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় গাড়িতে গুলি লাগার মতো শব্দ আসে। মোহসেন তখন কী হয়েছে তা দেখতে গাড়ির বাইরে আসেন।
তিনি গাড়ির বাইরে এলে প্রায় ১৫০ মিটার (১৬৪ গজ) দূর থাকা একটি পার্ক করা নিশান গাড়ি থেকে দূর-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হয় বলে ফারসের সংবাদে বলা হয়েছে।
ফারসের সংবাদ মতে, মোহসেনের গায়ে অন্তত তিনটি গুলি এসে লাগে। এরপর নিশান গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনা মাত্র তিন মিনিট স্থায়ী ছিল বলেও ফারস প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সিএনএন স্বাধীনভাবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামির বরাত দিয়ে দেশটির আধা-সরকারি ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সিও (আইএসএনএ) জানিয়েছে, মোহাসেনের গাড়িতে গুলি করা হয়েছিল। এরপর একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হয়। কিছুক্ষণ গোলাগুলিও চলে।
এছাড়াও, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, আগে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। পরে আক্রমণকারীরা গুলি ছোড়ে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ইরানের ধর্মীয়নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিসহ দেশটির শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা প্রধান পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।
তারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন।
আলি খামেনি গত শনিবার টুইটারে আনুষ্ঠানিক বার্তায় বলেছেন, ‘অত্যাচারী শত্রুদের হাতে মোহসেন ফাখরিজাদেহ নিহত হয়েছেন। এমন দুর্লভ বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ তার মহান বৈজ্ঞানিক কাজের জন্যে জীবন দিলেন।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘এমন লজ্জাজনক দ্বিচারিতার’ অবসান ঘটানোর অনুরোধ করেছেন। এই ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের’ পেছনে ইসরায়েলের ভূমিকা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আলি খামেনির সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল হোসেইন দেহগান গত শনিবার টুইটারে বলেছেন, ‘ইহুদিবাদীরা’ একটি ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ জড়ানোর পথ খুঁজছে।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বলেছেন, ‘ইরানের শত্রুদের জানা উচিত ইরানি জাতি ও দেশটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সাহসী। এই হত্যার প্রতিশোধ সময় মতো নেওয়া হবে।’
তিনি এই হত্যার পেছনে ‘ইসরায়েলের’ সহযোগীদের ভূমিকা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
ইরানি কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ে সিএনএন’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে কেউ রাজি হননি।
ইসরায়েলের অভিবাসন-বিষয়ক মন্ত্রী জাচি হানেগবি দেশটির চ্যানেল টুয়েলভ নিউজকে বলেছেন, মোহাসেন ফাখরিজাদেহকে কারা হত্যা করেছেন যে বিষয়ে তার কোনো ‘ধারণা’ নেই। তিনি ঘটনাটিকে ইরানের জন্যে ‘খুবই বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
Comments