ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান
চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এখনো মেনে নেননি নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে বিজয়ী জো বাইডেনকে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প নীরব রয়েছেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে তার মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে।
আজ মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, ট্রাম্প কি ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান?
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি ২০২৪ সালের বিষয় নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না।’
ফক্স প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তার উপদেষ্টাদের বলেছেন যে তিনি আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে অথবা সেই সময় তিনি এই ঘোষণা দিতে চান।
তবে ট্রাম্প এমন ঘোষণা দিলে তা রিপাবলিকান দলের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ট্রাম্পের তৃতীয়বারের মতো মনোনয়ন নেওয়ার ইচ্ছাকে ‘বরফ চাপা’ দিয়ে ফেলতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
রিপাবলিকান দলের কৌশলপ্রণেতা অ্যালেক্স কোনান্ট গণমাধ্যমকে বলেছেন, ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা নির্বাচনে লড়াই করার প্রক্রিয়াকে ‘পুরোপুরি’ পাল্টে দিতে পারে।
তার মতে, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনে দলের মধ্যে প্রথমে কেউই ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইবেন না। তবে এটি যদি সত্যিকারের প্রতিযোগিতা হয়, তাহলে দেখবেন অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীই এগিয়ে আসবেন। দেখা যাবে এ বছর শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রচারণা শুরু করে দিচ্ছেন।’
সংবাদ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন: আরকানসাস থেকে নির্বাচিত সিনেটর টম কটন, সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর নিকি হ্যালি ও সাউথ ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েম।
অ্যালেক্স কোনান্ট মনে করেন, ‘২০২৪ সালের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ট্রাম্প সম্পর্কে এখন কিছু বলতে চান না। তারা নিজেদের প্রার্থীতা নিয়েই কথা বলতে চান। কিন্তু, ট্রাম্প আবারও প্রার্থী হতে চাইলে দলের মধ্যে পুরো প্রতিযোগিতা তাকে ঘিরেই শুরু হয়ে যাবে। তখন সম্ভাব্য প্রার্থীরা আর নিজেদের প্রচারণায় নামতে আগ্রহী হবেন না।’
রিপাবলিকান দলের একজন উপদেষ্টা ডেভিড কার্নেও মনে করেন, ট্রাম্প যদি আবারও প্রার্থী হতে চান তাহলে দল একটি ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যে দলের একজন প্রকৃত প্রার্থী এতে ঘাবড়ে যাবেন। কেননা, এখনো চার বছর বাকি। কেউই জানেন না যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে। তাই এখনই বিষয়টি খুব একটা প্রভাব ফেলছে বলে আমি মনে করছি না।’
রিপাবলিকান দলের একজন পৃষ্ঠপোষক ড্যান ইবারহার্ট ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের অবস্থান নড়ে যাচ্ছে। তিনি হয়তো ২০২৪ সালের জন্যে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করতে পারেন, তবে অনেক অর্থদাতা এখন অন্য প্রার্থীদের প্রতি আগ্রহ দেখাতে পারেন।’
ট্রাম্প পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর তিনি রিপাবলিকান দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকবেন। তিনি ইতোমধ্যে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারপারসন রোনা ম্যাকড্যানিয়েলকে পরবর্তী মেয়াদের জন্যে মনোনয়ন দিয়েছেন।
কংগ্রেসের অনেক রিপাবলিকান সদস্য এখনো বাইডেনের বিজয় মেনে নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে অনুরোধ করেননি। এমনকি, তারা নিজেরাও বাইডেনের বিজয় মেনে নেননি। ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্পের প্রতি রিপাবলিকান ভোটারদের ব্যাপক সমর্থনের কারণেই তারা হয়তো এমনটি করছেন।
গত ১৯ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, অঙ্গরাজ্যটিতে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রিপাবলিকান ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে দেখতে চান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভে সেন্টারের পরিচালক অ্যান্ড্রু স্মিথের মত, ‘রিপাবলিকানরা যতক্ষণ না ট্রাম্পের বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন ততক্ষণ তাকেই ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রধান প্রার্থী হিসেবে দেখা হতে পারে।’
তবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও তারা গোপনে অর্থদাতাদের সঙ্গে কথা বলছেন, কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগামী নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্যে।
Comments