ক্যানসার থেকে কোভিড-১৯ পর্যন্ত চিকিত্সায় নাটকীয় পরিবর্তন আনবে ‘আলফাফোল্ড’
‘প্রোটিন ফোল্ডিং’ বা প্রোটিনের ভাঁজ নিয়ে গবেষণা চালাতে ‘আলফাফোল্ড’ নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রোগ্রাম তৈরি করেছে গুগলের ডিপমাইন্ড।
আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, ‘প্রোটিন ফোল্ডিং’ বা প্রোটিনের ভাঁজ নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক বছরের গবেষণার ক্ষেত্রে ‘আলফাফোল্ড’ একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।
প্রোটিনের ত্রি-মাত্রিক আকারের ম্যাপিং যা ‘প্রোটিন ফোল্ডিং’ হিসেবে পরিচিত, ক্যানসার থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ পর্যন্ত রোগের জন্য দায়ী।
গবেষকদেরর মতে, ডিপমাইন্ডের তৈরি এআই আলফাফোল্ড যদি সফল হয়, তবে ৫০ বছরের পুরনো একটি বিজ্ঞানের সমস্যার সমাধান হবে। ক্যানসার থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের চিকিত্সায় এটি নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে।
বর্তমানে প্রায় ২০০ মিলিয়ন পরিচিত প্রোটিন রয়েছে। তবে, কীভাবে তারা কাজ করে, তা সম্পূর্ণভাবে বোঝার জন্য কেবল একটি পদ্ধতিই আছে। এমনকি যেসব প্রোটিনকে সফলভাবে বোঝা গেছে, সেগুলোও কৌশলগত কারণে পরীক্ষা করতে প্রচুর অর্থ ও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। বছরের পর বছর প্রতিটি কাঠামোকে উদঘাটন করতে হয়, যেখানে কয়েক মিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম লাগে।
ডিপমাইন্ড জানায়, তারা ওই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রকল্পে ১৪তম ক্রিটিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট অব টেকনিকস ফর প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন (সিএএসপি ১৪) নামের বিজ্ঞানীদের একটি দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। সিএএসপি ১৯৯৪ সাল থেকে প্রোটিন ফোল্ডিং নিয়ে কাজ করছে।
সিএএসপি ১৪’র চেয়ার ড. জন মোল্ট বলেন, ‘প্রোটিন অত্যন্ত জটিল অণু। তাদের সুক্ষ্ম ত্রিমাত্রিক কাঠামো তারা যেসব ভূমিকা পালন করে, সেটির মূল চাবিকাঠি। উদাহরণ হিসেবে আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যে ইনসুলিন ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে যেসব অ্যান্টিবডি লড়াই করে থাকে তাদের কথা বলা যেতে পারে। এই গুরুত্বপূর্ণ অণুগুলোর এমনকি ছোট্ট কোনোটির পুনঃস্থাপনও আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই রোগ বুঝতে ও নতুন চিকিত্সা সন্ধান করতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো এর সঙ্গে জড়িত প্রোটিনগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসসহ মানবদেহে কয়েক লাখ ও অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে কয়েক কোটি প্রোটিন রয়েছে। কিন্তু, যদি একটির আকারও আমরা তৈরি করতে চাই, তবে অনেক ব্যয়বহুল সরঞ্জাম প্রয়োজন। এ ছাড়াও, অনেক বছর সময়ও লাগতে পারে।’
ডিপমাইন্ড জানায়, তাদের সর্বশেষ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ল্যাব পরীক্ষার তুলনায় আলফাফোল্ড কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভুলভাবে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বেশি প্রোটিনের আকার নির্ধারণ করে।
এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফল অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে, যাতে বাইরের বিজ্ঞানীরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে পারেন।
তবে, একাধিক প্রোটিন কীভাবে কমপ্লেক্স গঠন করে এবং কীভাবে তারা ডিএনএর সঙ্গে যোগাযোগ করে— এগুলো যাচাইসহ আরও অনেক কাজ এখনো বাকি আছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের গবেষকরা।
বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় যাতে এটি যাচাই করতে পারে সেজন্য একটি জার্নালে তাদের তৈরি এআইয়ের কাঠামো ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ডিপমাইন্ড।
রয়্যাল সোসাইটির সভাপতি, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ভেনকি রামাকৃষ্ণান বলেন, ‘এই কাজটি জীববিজ্ঞানের ৫০ বছরের পুরনো চ্যালেঞ্জ প্রোটিন-ভাঁজ সমস্যার এক অত্যাশ্চর্য অগ্রগতির নির্দেশ করে। অনেকের ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণিত করে, কয়েক দশক আগেই এটি ঘটেছে। জৈবিক গবেষণায় এটি কীভাবে ভূমিকা রাখবে, জীববিজ্ঞানকে কতদূর সামনে নিয়ে যাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
ডিপমাইন্ড জানায়, অন্যান্য বিষয় ছাড়াও প্রোটিন কাঠামো নিয়ে অধ্যয়ন আগামী মহামারি প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যেই মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি সার্স-কোভ-২ বা নোভেল করোনাভাইরাদের প্রোটিন কাঠামোর ওপর ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপমাইন্ড।
Comments