উড়োজাহাজ চলাচলে পতঙ্গ সমস্যা
ভীমরুল বা বোলতা জাতীয় এক ধরনের ছোট পতঙ্গের বিস্তারের কারণে নতুন করে সঙ্কটে পড়ছে উড়োজাহাজ চলাচল ব্যবস্থা।
গতকাল সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার কঠোর জৈবনিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে এই ছোট পতঙ্গ দেশটির ব্রিসবেন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উঠা-নামায় হুমকি সৃষ্টি করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর বরাত দিয়ে এতে আরও বলা হয়, ২০১৩ সালে প্রথম এই পতঙ্গের কারণে ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের সিঙ্গাপুরগামী একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে বিমানবন্দরটিতে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিল।
এরপর রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীরা দেখতে পান, উড়োজাহাজের বাইরে থাকা পাইলটের ‘পিটট টিউব’, যার মাধ্যমে বাতাসের গতি মাপা হয়, তা কাদায় ভরে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্রিসবেন বিমানবন্দর, অস্ট্রেলিয়ার কান্তাস এয়ারওয়েজ ও পরিবেশবিষয়ক পরামর্শক সংস্থা ইকোসিওর বিশ্বে এই প্রথম এমন বিষয় নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যা গত সপ্তাহে পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা বলেছেন, যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই পতঙ্গগুলো অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বিমানবন্দর ও প্রতিবেশী উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে ছড়িয়ে যেতে পারে।
ইকোলজিক্যাল অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ অ্যালেন হাউস গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা যখন এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছিলাম তখন দেখতে পাই এই পতঙ্গের কারণে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
এই পতঙ্গের কারণে ব্রিসবেন বিমানবন্দরে এখনো কোনো বড় দুর্ঘটনা না ঘটলেও অন্যান্য দেশে বিভিন্ন দুর্ঘটনার সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
যেমন, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিরজেনএয়ারের একটি উড়োজাহাজ ১৮৯ যাত্রী ও ক্রু নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল ডোমিনিকার প্রজাতন্ত্রের উপকূলে। তখন পিটট টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়াকে একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।
২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিভিল অ্যাভিয়েশন সেফটি অথরিটি (সিএএসএ) সব পাইলট, এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দরকে এই পতঙ্গের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে।
ব্রিসবেন বিমানবন্দরে থাকার সময় সব এয়ারলাইন্সকে পিটট টিউব ঢেকে রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
ব্রিসবেন বিমানবন্দরের হিসাবে, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সিএএসএ’র মতে, ২০১২ সাল থেকে ব্রিসবেন বিমানবন্দরে এই পতঙ্গের দেখা যাচ্ছে। এই পতঙ্গ সেখানকার একটি ছোট বিমানবন্দরেও দেখা গেছে। তবে অন্য কোনো বিমানবন্দরে তা দেখা যায়নি।
কিন্তু, গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ধরনের পতঙ্গ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা গেছে। এছাড়াও, জাপান, হাওয়াই ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল মাক্রোনেশিয়া ও পলেনেশিয়ায় দেখা গেছে।
গবেষকরা পাপুয়া নিউ গিনি ও ফিজির বিমানবন্দরগুলোতে কাজ করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ অ্যালেন হাউসের মতে, ‘এই ধরনের ছোট পতঙ্গগুলোকে এখন হাল্কা ঝুঁকি হিসেবে দেখা হলেও, এ থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
Comments