পদ্মা সেতুর ৪০তম স্প্যান বসবে কাল, দৃশ্যমান হবে ৬ কিলোমিটার

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের ওপর ৪০তম স্প্যান বসছে আগামীকাল শুক্রবার। ইতোমধ্যে স্প্যানটিকে দুই পিলারের কাছে নোঙর করে রাখা হয়েছে। কাল শুধু দুই পিলারের ওপর তোলার কাজটি বাকি থাকল।
পদ্মা সেতুতে ৪০তম স্প্যান বসছে আগামীকাল। ছবি: স্টার

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের ওপর ৪০তম স্প্যান বসছে আগামীকাল শুক্রবার। ইতোমধ্যে স্প্যানটিকে দুই পিলারের কাছে নোঙর করে রাখা হয়েছে। কাল শুধু দুই পিলারের ওপর তোলার কাজটি বাকি থাকল।

স্প্যানটিকে দুই পিলারের ওপর স্থায়ীভাবে বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে সেতুর ছয় কিলোমিটার। এরপর বাকি থাকবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্প্যান বসানো। ৩৯তম স্প্যান বসানোর সাত দিনের মাথায় শুরু হয়েছে এ স্প্যানটি বসানোর কার্যক্রম। আর বিজয়ের মাসে সেতুতে স্প্যান বসানোর কাজটি সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে প্রমত্তা পদ্মা জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। শুরু থেকে নানা বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গেছে সেতুর কাজ। আর এখন পদ্মাপাড়ের মানুষদের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার।

অনুকূল আবহাওয়া থাকলে এবং কারিগরি জটিলতা দেখা না দিলে আগামীকাল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্প্যানটি স্থাপন করা সম্ভব হবে। এর জন্য চলছে শেষ ধাপের প্রস্তুতি। অক্টোবরে চারটি স্প্যান ও নভেম্বরে চারটি স্প্যান বসানো সম্ভব হয়েছে। এ মাসে লক্ষ্য অনুযায়ী দুইটি স্প্যান স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকৌশলীদের।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৪০তম স্প্যানকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেনটি প্রায় ৩০ মিনিট সময় নিয়ে নির্ধারিত পিলারের কাছে পৌঁছায়। এরপর শুরু হয় ভাসমান ক্রেনটির নোঙর করার কাজ। বেলা ১২টার দিকে শেষ হয় ছয়টি ক্যাবলের (তার) মাধ্যমে নোঙর করার কাজটিও। আগামীকাল শুধু দুই পিলারের ওপর স্প্যানটিকে রাখার কাজটি বাকি রাখা হলো।

প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় কাজ এগিয়ে রাখার জন্য স্প্যানটিকে পিলারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কাজটিও শেষ করে রাখা হয়েছে। কোনো রকম আশঙ্কা ছাড়াই যাতে স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া যায়, এরজন্য কাজটি সেরে রাখা হয়েছে। স্প্যানটিকে বহন করে নিয়ে যাওয়া, নোঙর করা, পজিশনিং সম্পন্ন করা হয়েছে। দুই পিলারের ওপর স্থাপন করার কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে ছয় কিলোমিটার। সবকিছু ঠিক থাকলে দুপুর ১টার আগেই এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রকৌশলীরা।

আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৪১তম স্প্যান (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর। এমন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বসানো হয়েছিল প্রথম স্প্যানটি। এরপর ধাপে ধাপে স্প্যান বসিয়ে এ পর্যন্ত ৩৯টি স্প্যান বসানো হয়েছে। সেতুর মোট পিলার ৪২টি এবং এতে স্প্যান বসবে ৪১টি।

সূত্র জানিয়েছে, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও চলমান। সেতুতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডস্ল্যাব। এর মধ্যে নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ২৩৯টিরও বেশি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেলস্ল্যাব। এ পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ৮৬০টিরও বেশি স্ল্যাব।

ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

Comments