নারায়ণগঞ্জ ১০ মাসে নির্যাতনের শিকার ১৯৫ নারী ও কন্যাশিশু: মহিলা পরিষদ
নারায়ণগঞ্জ জেলায় বছরের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, শিশু হত্যা, উত্ত্যক্তকরণ, অপহরণ ও শারীরিক-মানসিকভাবে ১৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা সংবাদ সম্মেলন করে জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের এই চিত্র তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলায় নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতিত হয়েছেন ১৯৫ জন। এর মধ্যে ধর্ষণ (নারী ও শিশু) ৭৫টি, গণধর্ষণ সাতটি, ধর্ষণের পর হত্যা নয়টি, হত্যা ১৩টি, শিশু হত্যা তিনটি, উত্ত্যক্তকরণ ২৫টি, যৌতুকের জন্য স্বামী কর্তৃক হত্যা পাঁচটি, অপহরণ পাঁচটি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ৫০টি এবং গৃহ পরিচারিকা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তিনটি।’
তিনি বলেন, ‘এ নির্যাতনের তালিকা আমরা দৈনিক পত্রিকার তথ্য এবং সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতে করেছি। মহামারিতে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অন্যথায় এ সংখ্যা বাড়তো।’
তিনি বলেন, ‘নারী ও কন্যার প্রতি সকল ধরনের সহিংসতার অবসান ঘটাতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনতে হবে। নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। যৌন হয়রানি ও ধর্ষন এর শিকার নারীকে দায়ী করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়, প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অপরাধীকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে হবে। আইনের আওতায় আনতে হবে ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষন মামলার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। তরুণ-যুবসমাজকে নারী ও কন্যার প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতার বর্বরতম রূপ হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণ একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ অপরাধ দমন এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটিয়ে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরাবার দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা ও তার প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা এবং ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যু যুক্ত করেছেন। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে বিদ্যমান আইন যথাযথ সময়ে যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখতে পারছে না।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি সালেহা বেগম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানারা বেগম প্রমুখ।
Comments