দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাবু মিয়ার সংগ্রাম

তিন বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে কবিরাজী চিকিৎসায় দুই চোখের দৃষ্টি হারান কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চর কড়াই এলাকার শাবু মিয়া। পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে উন্নত চিকিৎসা আর জোটেনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।
নিজ খেতে কাজ করছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাবু মিয়া। ছবি: স্টার

তিন বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে কবিরাজী চিকিৎসায় দুই চোখের দৃষ্টি হারান কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চর কড়াই এলাকার শাবু মিয়া। পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে উন্নত চিকিৎসা আর জোটেনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।

তবে, এখন ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাবু মিয়া (৩৭) সংগ্রামী ও সফল মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। চোখে দেখতে না পেলেও সেই প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি।

জীবিকার তাগিদে ১৬ বছর আগে স্থানীয় চর ঢুশমারা বাজারে ছোট একটি মুদির দোকান চালু করেন শাবু মিয়া। তিন বছর পর স্থানীয় চর বিশারপাড়া জামে মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ পান। মুদির দোকানের আয় আর মুয়াজ্জিনের এক হাজার টাকা বেতনে চলতে থাকে সংসার। দুই বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে কৃষি কাজের ওপর প্রশিক্ষণ তিনি নিয়ে বাড়ির পাশের বালুর চরে ফসল ফলানো শুরু করেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ ও আইসিসিও কো-অপারেশন যৌথভাবে সাসটেইন্ড অপরচুনিটি ফর নিউট্রিশন গভার্নেন্স (এসওএনজিরও) প্রকল্প থেকে দেওয়া হয় কৃষি কাজে কারিগরি সহায়তা।

শাবু মিয়া জানান, তিনি এখন বালু চরে বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপন্ন করছেন। প্রথম দিকে কৃষি কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন তিনি অনায়সে খেতে কাজ করতে পারেন।

‘মুদির দোকানে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকার বিক্রি করে ৭০-৮০ টাকা উপার্জন করছি, সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। সবকিছু মিলে সংসার চলছে কোনো রকমে,’ বলেন তিনি।

উৎপাদিত শাক-সবজি পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন বলেও জানান শাবু মিয়া। বালু চরে ফসল ফলাতে স্ত্রী ও সন্তানেরা তাকে সহযোগিতা করছে।

শাবু মিয়ার স্ত্রী শাহিদা বেগম (৩০) জানান, তাদের তিন সন্তান স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। স্বামীর আয়ে সংসার চলছে কোনো রকমে।

‘স্বামীর পাশাপাশি আমিও কৃষি খেতে কাজ করে ফসল উৎপাদন করি। আমার স্বামী নিরলস মানুষ। মুদির দোকানে মালামাল বিক্রি করেন। বাড়িতে এসে ফসলের খেতে কাজ করেন, ফসলের যত্ন নেন। সময়মতো মসজিদে গিয়ে আজানও দেন,’ বলেন শাহিদা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আঙ্গুর আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাবু মিয়া একজন সংগ্রামী মানুষ। সারা দিনভর তিনি কাজে ব্যস্ত থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি কোনো সহায়তা এলে তাকে দেওয়া হয়।’

এসওএনজিও প্রকল্পের চিলমারী উপজেলা সমন্বয়কারী আহসানুল কবির বুলু জানান, শাবু মিয়াকে শাক-সবজি উৎপাদনে সর্বত্মক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তার কাছ থেকে উৎপাদিত শাক-সবজিও কেনা হচ্ছে ন্যায্য দামে।

‘শাবু চরাঞ্চলের সফল চাষিদের একজন হয়ে উঠেছেন’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago