করোনায় পিছিয়ে গেল চরের শিক্ষার্থীরা

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিলন ইসলাম। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার বুকে চর গোকুন্ডার কৃষি পরিবারের সদস্য সে। করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গেল নয় মাস ধরে বইয়ের সঙ্গে নেই তার কোনো সম্পর্ক। তার সময় কাটছে চরের জমিতে ফসলের খেতে কাজ করে। দিনভর শ্রম দিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করছে ফসল ফলাতে। বাড়ি থেকেও পড়াশোনার নেই কোনো চাপ।
বাবার সঙ্গে খেতে কাজ করছে চর গোকুন্ডার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিলন ইসলাম। ছবি: স্টার

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিলন ইসলাম। লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার বুকে চর গোকুন্ডার কৃষি পরিবারের সদস্য সে। করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গেল নয় মাস ধরে বইয়ের সঙ্গে নেই তার কোনো সম্পর্ক। তার সময় কাটছে চরের জমিতে ফসলের খেতে কাজ করে। দিনভর শ্রম দিয়ে বাবাকে সহযোগিতা করছে ফসল ফলাতে। বাড়ি থেকেও পড়াশোনার নেই কোনো চাপ।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর শাখা হাতীর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোবেদ আলীরও নয় মাস ধরে বইয়ের সঙ্গে নেই সম্পর্ক। পড়াশোনা ছেড়ে চরের জমিতে বাবার সঙ্গে ফসল ফলাতে ব্যস্ত থাকছে সেও। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে কি আছে, জানা নেই তার।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর বুকে চর সোনাই গাজী। এই চরের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান। বাবা আফজাল হোসেন চরের কৃষক। করোনা মহামারিতে বিদ্যালয় বন্ধ, তাই বাবার সঙ্গে চরের জমিতে প্রতিদিন কাজ করতে হয় আতিকুরকে। পড়াশোনা করার কথা ভুলেই গেছে আতিকুর। সারা দিনভর কৃষি ফসল ফলাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে সে।

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুই জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর বুকে তিন শতাধিক চরে ৯৫টি প্রাথমিক ও ১৭টি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর পার্বতীর কৃষক মিনাজুল ইসলামের ছেলে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় সে গেল নয় মাস ধরে কোনো পড়াশোনা করার সুযোগ পায়নি। সকালে বাবার সঙ্গে চরের জমিতে কাজ শুরু করে বিকেলে শেষ করে। এভাবে কাটছে তার করোনা মহামারির সময়কাল। ‘আমরা তো আর প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়াশোনার সুযোগ পাইনা। স্কুল-নির্ভর পড়াশোনা করি। স্কুলে যা পড়ায়, তা বাড়িতে চর্চা করি। করোনা মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ায় আমাদের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে’, বলে নজরুল।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তার বুকে চর গোবর্ধানের কৃষক গোলজার হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম জানায়, তার পাঠ্যপুস্তক বইয়ের কোথায়, কী আছে সেটা তার জানা নেই। নয় মাস ধরে বই পড়ার সুযোগ পায়নি। স্কুল খোলা থাকলে পড়াশোনার সুযোগ হতো।

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর কোদালকাটির কৃষক শমসের আলী (৫০) জানান, তাদের শিশুরা স্কুল-নির্ভর পড়াশোনা করে। স্কুল খোলা থাকলে সেখানে পড়তে যায় আর বাড়িতে এসে স্কুলের পড়া তৈরি করে। তারা শিশুদের পড়াশোনার জন্য প্রাইভেট শিক্ষক রাখতে পারেন না। করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় চরের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর মনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপেন্দ্র নাথ দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চরের শিশুরা সাধারণত শুধু স্কুলেই পড়াশোনার চর্চা করে থাকে। কিন্তু, স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের চর্চা ভেস্তে গেছে। চরের অধিকাংশ অভিভাবকের বাড়িতে প্রাইভেট শিক্ষক রাখার সামর্থ্য নেই। আর পড়াশোনার জন্য তারা শিশুদের চাপও দেয় না। করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় চরের শিশুরা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে গেল। শিক্ষায় তাদের এ ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।’

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মূল ভূ-খণ্ডের অভিভাবকরা সচেতন, তাই কোনো না কোনোভাবে তাদের শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, চরাঞ্চলে অভিভাবকরা সচেতন নয়, তাই তারা তাদের শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তা ছাড়া, গৃহশিক্ষক রেখে শিশুদের পড়াশোনা করানোর সামর্থ্যও তাদের নেই।’

‘স্কুল খোলার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, কীভাবে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে’, যোগ করেন গোলাম নবী।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam sons: They used fake pay orders even to legalise black money

Ashraful Alam and Asadul Alam Mahir, two sons of controversial businessman Mohammed Saiful Alam, deprived the state of Tk 75 crore in taxes by legalising Tk 500 crore in undisclosed income, documents obtained by The Daily Star have revealed.

44m ago