ক্রিকেটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেলা

চরের শিশুরা এখন ক্রিকেট খেলে সময় কাটায়। ছবি: দিলীপ রায়

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে আর চোখে পড়ে না চরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। কিছু কিছু চরাঞ্চলের শিশুদের ফুটবল খেলতে দেখা গেলেও হারিয়ে গেছে কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, ঘুড়ি ওড়ানো ও হা-ডু-ডু। ক্রিকেট কেড়ে নিয়েছে চরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। চরের শিশুরা এখন ক্রিকেট ছাড়া অন্য খেলায় মনোনিবেশ করতে পারে না, আর পছন্দও করে না। চরাঞ্চলের বালুচরে প্রতিদিন চলে চর শিশুদের ক্রিকেট চর্চা।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর চর সোনাই গাজীর অধিবাসী বেলাল হোসেন (৭০) জানান, তারা চরের বালু মাটিতে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা বিশেষ করে হা-ডু-ডু, ঘুড়ি ওড়ানো, ফুটবল, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট ও কানামাছি খেলে বড় হয়েছেন। এখন আর এসব খেলা চোখে পড়ে না। আজকের শিশুরা বল আর ব্যাট হাতে নিয়ে ক্রিকেট খেলছে।

চরের বালুচর শিশুদের খেলার মাঠ। ছবি: দিলীপ রায়

চরের এই বয়স্ক ব্যক্তি জানান, তার কাছে ক্রিকেট খেলা পছন্দের নয়। এটা বিদেশি খেলা। এ খেলায় কোনো ঐতিহ্য নেই। হা-ডু-ডু, ফুটবল, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, ঘুড়ি ওড়ানো খেলায় ঐতিহ্য আছে, প্রেম আছে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চর জোড়গাছ এলাকার অধিবাসী শিবেন্দু চন্দ্র দাস (৭৫) জানান, আজকের দিনের চরাঞ্চলের অনেক শিশুই ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে জানেই না। তারা শুধু ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। চরাঞ্চলে একসময় হা-ডু-ডু, ফুটবল ও ঘুড়ি ওড়ানোর ধুম পড়ে যেত। এখন আর এসব খেলা চোখেই পড়ে না। চরের ঐতিহ্যবাহী সব খেলাধুলা হারিয়ে গেছে। আর বিদেশি খেলা ক্রিকেট দখল করে নিয়েছে জায়গা। হারানো ঐতিহ্য আর ফিরে আসার সম্ভাবনাও নেই।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা নদীর চর গোকুন্ডা এলাকার অধিবাসী মেছের আলী (৬৫) বলেন, ‘৬-৭ বছর আগেও চরাঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার চর্চা ছিল। এখন আর নেই। চরের শিশুরা ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত। চরে হা-ডু-ডু, ফুটবল ও ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে। ক্রিকেট সংস্কৃতির কারণে চরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে।’

সময় পেলেই বালুচরে ক্রিকেট খেলে সময় কাটে শিশুদের। ছবি: দিলীপ রায়

এই চরের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিলন ইসলাম জানায়, তারা ক্রিকেট খেলতে অভ্যস্ত। আর ক্রিকেট খেলাই তাদের কাছে প্রধান খেলা।

‘আমরা ক্রিকেট খেলা দেখে যে মজা পাই অন্য খেলা খেলেও সেই মজা পাই না। তাই আমরা সময় পেলে ক্রিকেট বল ও ব্যাট নিয়ে চরে যাই। আর সেখানে চলে ক্রিকেট চর্চা’ বলে মিলন ইসলাম।

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার চর কোদালকাটি এলাকার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন জানায়, চরে শুধু বালু আর বালু। এখানে ক্রিকেট খেলে তেমন মজা না পাওয়া গেলেও তারা ক্রিকেট ছাড়া কিছুই খেলে না। চরে খেলার মাঠ নেই। তাই ধুধু বালুচর তাদের খেলার মাঠ। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে চরের শিশুরা একত্রিত হয়ে ক্রিকেট খেলা খেলে।

‘আমরা ক্রিকেট ছাড়া কিছু বুঝি না। ক্রিকেট খেলে আমরা মজা পাই, শান্তি পাই। ক্রিকেট খেলাই এখন আমাদের শখ,’ বলে দেলোয়ার।

ছবি: দিলীপ রায়

এই চরের শিক্ষক আমিনুর রহমান (৫০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ক্রিকেট এখন চরাঞ্চলে ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। চরাঞ্চলে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাও এখন আর আয়োজন করা হয় না। শুধু শিশুরাই নয় চরের যুবকরাও ক্রিকেট খেলছে। চরে খেলার মাঠ নেই, কিন্তু চরের শিশুরা বালুচরে ক্রিকেট চর্চা করে। প্রত্যেক চরে ক্রিকেট খেলার ধুম চোখে পড়ে।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় চরের জীবিকা নিয়ে কাজ করে একটি এনজিও’র প্রতিনিধি আহসানুল কবির বুলু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে প্রায় তিনশ চরের শিশুদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। ছয় বছর আগেও চরাঞ্চলে পুরাতন ঐতিহ্য খেলার কিছু প্রচলন চোখে পড়লেও এখন আর পড়ে না। ক্রিকেট খেলা দখল করে নিয়েছে চরের খেলাধুলার সংস্কৃতিকে।’

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago