মাটির ‘হাজোলে’ ফুটছে মুরগির বাচ্চা

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ‘হাজোল’। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে মাটির তৈরি হাঁড়ি— স্থানীয়ভাবে এটি ‘হাজোল’ নামে পরিচিত।

‘হাজোল’ মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে একটি কার্যকরী প্রযুক্তি। এটি ব্যবহার করে চরের মানুষ মুরগির ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফোটাতে পারছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাটির তৈরি একটি ‘হাজোলে’ তিনপিট কুঠুরি থাকে। বড় কুঠুরি ব্যবহার হয় মুরগি ও ডিমের জন্য আর ছোট দুটি কুঠুরির একটিতে রাখা হয় পানি আর একটিতে খাদ্য।

ডিমে তাঁ দেওয়ার সময় মুরগি ছোট দুটি কুঠুরি থেকে খাবার-পানি নিয়ে থাকে। ফলে খাবারের জন্য মুরগিকে তাঁ দেওয়া ডিম ছেড়ে আসতে না হয় না।  তাই এসব ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে শতভাগ।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর বিসারপাড়ার গৃহবধু সাহেদা বেগম (৩৫) ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘গত একবছর ধরে “হাজোল” প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাচ্ছি। এ পদ্ধতিতে শতভাগ বাচ্চা পাচ্ছি। এর আগে ৪৫-৫০ শতাংশ বাচ্চা পেতাম। বাকি ৫০ শতাংশ ডিম থেকে বাচ্চা আসার আগেই নষ্ট হয়ে যেত।’

একই চরের দিনমজুর মহিরন বেগম (৪৫) ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আগে ডিমে তাঁ দেওয়াকালে মুরগি খাবার-পানির জন্য বাইরে আসতো। এতে ডিমে তাঁ নষ্ট হয় যেত এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতো না।

‘হাজোল’ পদ্ধতির কারণে তারা শতভাগ বাচ্চা পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বলেছেন, ‘ডিমে তাঁ দেওয়ার সময় মুরগির জন্য ছোট দুটি কুঠুরিতে খাবার-পানি রাখতে হয় শুধু। “হাজোল” পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছি।’

একই উপজেলার চর জোড়গাছ এলাকার গৃহবধু কোহিনুর বেগম (৪০) ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘গত এক বছরে তিনবার “হাজোল” পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬০টি ডিম থেকে ৬০টি বাচ্চা পেয়েছি। মাটির “হাজোল” অনেক দিন ব্যবহার করা যায়।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ ও আইসিসিও যৌথভাবে সাসটেইন্ড অপরচুনিটি ফর নিউট্রিশন গভর্নেন্স (এসওএনজিও) এই প্রকল্পটি চরাঞ্চলে বাস্তবায়ন করছে।

এসওএনজিও প্রকল্পের চিলমারী উপজেলা সমন্বয়কারী আহসানুল কবির বুলু ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাতে চরবাসীর মাঝে “হাজোল” পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। চরের নারীদের এই পদ্ধতির জন্য মাটি দিয়ে “হাজোল” তৈরি শেখানো হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে তারা লাভবান হওয়ায় চরবাসী এটি প্রহণ করেছেন।’

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘কোন প্রকার খরচ ছাড়াই মাটির “হাজোল” দিয়ে মুরগির ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাচ্ছেন চরের মানুষ। শুধু চর নয়, সব এলাকায় “হাজোল” পদ্ধতি ব্যবহার করে মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটালে শতভাগ সফল হওয়া যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

IAEA chief expects 'very significant damage' at Iran's Fordow site

Iran vowed to defend itself a day after the US dropped 30,000-pound bunker-buster bombs onto the mountain above Iran's Fordow nuclear site

1d ago