হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

প্রধানমন্ত্রী খাঁটি মুসলমান, তিনি ঈমানি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজত নেতাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কিছু করবো না। আবার আমরা কোনো ধর্মকে অবমাননা করবো না। প্রধানমন্ত্রী একজন খাঁটি মুসলমান এবং তার ওপর যে ঈমানি দায়িত্ব রয়েছে তা তিনি পালন করে যাচ্ছেন।
Home Minister-1.jpg
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল| ফাইল ফটো

ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজত নেতাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল বলেছেন, আমরা সংবিধানের বাইরে কিছু করবো না। আবার আমরা কোনো ধর্মকে অবমাননা করবো না। প্রধানমন্ত্রী একজন খাঁটি মুসলমান এবং তার ওপর যে ঈমানি দায়িত্ব রয়েছে তা তিনি পালন করে যাচ্ছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল গভীর রাতে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) সভাপতি মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে দেশের ১২ জন শীর্ষস্থানীয় হেফাজত নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে মতবিনিময় করেন। সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষস্থানীয় হেফাজত নেতারা বেফাক সভাপতি মাহমুদুল হাসানের ডাকে একত্রিত হয়েছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পত্র দিয়েছেন। সেখানে পাঁচটি প্রস্তবনা আছে। গতকাল সে বিষয়ে ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরও আলাপ হবে, এর মাধ্যমে আমরা সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী একজন খাঁটি মুসলমান এবং তার ওপর যে ঈমানি দায়িত্ব রয়েছে তা তিনি পালন করে যাচ্ছেন।

তারা কি ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থান সরে এসেছে?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের দেওয়া প্রস্তাবনা নিয়ে আলাপ করেছি। আলাপ-আলোচনাগুলো শেষে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারবো বলেই আমি বিশ্বাস করি। আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি, কেউ যেন রাস্তায় নেমে ভাঙচুর না করে। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না করে। ফেসবুকে উত্তেজনা ছাড়ানোর যে প্রয়াস চলছে তার বিরুদ্ধে তারাও অবস্থান নেবেন। তারা বলেছেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন।

কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন রাস্তায় নেমে ভাঙচুর না করে। অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না করে। কেউ যেন সরকারবিরোধী আন্দোলন না করে সেই আহ্বান তারা জানাবেন বলে গেছেন। তারা বলেছেন, পাঁচটি প্রস্তাবনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা শেষ করতে চান।

যে ইস্যু নিয়ে আলোচনা তা সংবিধান পরিপন্থি। এ নিয়ে সুস্পষ্ট আইন আছে। যেখানে আইন কথা বলবে সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় তারা আলোচনা করছে। সরকার নতজানু অবস্থানে আছে কি না?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না। সরকার কখনো নতজানু নীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছে, আমরা বলছি আলোচনা চলবে। তারা সুন্দর কথা বলেছেন। ফেসবুকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ হতে বলেছেন। কোনো প্রকার নৈরাজ্য যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে তারা ঐক্যবদ্ধ। কোনো রকম আন্দোলন তারা করবেন না। সংবিধানবিরোধী হলে আমাদের মানার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না, আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাই না।

যারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যায় কি না?— প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, নতজানু রাজনীতি কখনো আওয়ামী লীগ করে না। আমাদের সরকার সব কিছু স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েই করে। সংবিধানের বাইরে আমরা কোনো কিছু করবো না। তার মানে এই নয় কোনো ধর্মকে আমরা অবমাননা করবো। ধর্মীয় বিধান মেনেই আমরা চলছি এবং চলবো। এটা তারাও মেনে গেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাহাজ্জুদের নামাজও আদায় করেন। তারাই মনে করেন তাদের প্রস্তাবনা আলোচনার মাধ্যমে শেষ হবে।

তাদের দাবি স্পষ্ট ছিল ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না। সেই বিষয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি। এটা যদি তাদের দাবি হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাহলে ভাস্কর্য নির্মাণ হবে কি, হবে না তা নিয়ে দোটানায় আছে সরকার— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত দেবো না। ভাস্কর্য যেখানে যেটা আছে তা থাকবে কি থাকবে না সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করছি। আমরা বলছি, ভাস্কর্য কেন করা হয়? এটা মূর্তি নয়। এটা পূজা করা হয় না। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু কে ছিলেন, তার অবদান চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য, হৃদয়ে ধারণ করার জন্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে চাচ্ছি। সেটা আমরা কথা বলছি, তারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলেছেন। এটাই আলোচনা মাধ্যমে সুন্দর সমাধানে আসবো বলে বিশ্বাস করি।

ভাস্কর্য থাকবে না এটা তারা বলেনি। তারা বলছে, যে জায়গায় মূল ভাস্কর্য যেখানে আছে, তার পাশে মুজিব মিনার করা যায় কি না। সেটা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা সব সময় আলোচনায় বিশ্বাস করি। ভাস্কর্য সরে যাবে, অন্য কিছু হবে এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভাস্কর্য নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। আমরা প্রস্তাব দেবো, তিনি রাজি হলে দেখা হবে— বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরও পড়ুন:

সংবিধানের বাইরে কিছু করবো না, কোনো ধর্মকে অবমাননা করবো না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago