ভ্যাকসিনের সুসংবাদের পর এবার কেলেঙ্কারির দুঃসংবাদ
করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বে সবচেয়ে আনন্দের ছিল ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, অনুমোদন ও তা প্রয়োগের সংবাদ। সেই আনন্দের মধ্যেই এসেছে ভ্যাকসিন নিয়ে কেলেঙ্কারির দুঃসংবাদও।
আজ বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাওয়ার পর তা প্রয়োগের জন্যে ধীরে ধীরে পুরো দেশে পাঠানো হচ্ছে।
কিন্তু, যারা ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাদের ভ্যাকসিন নিয়ে চরম দুর্নীতি ও ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে ভুল তথ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছে, দুর্নীতিবাজরা মানুষের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্যের বিনিময়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
এমনকি, অনেক কোম্পানি ‘করোনা প্রতিরোধ করবে’ এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুয়া চিকিৎসা দিচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এক বার্তায় সিএনএন’কে জানিয়েছে, ‘এফবিআই অভিযোগ পেয়েছে— করোনা ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি চক্র অনেকের ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন পন্থায় অর্থ নেওয়া চেষ্টা করছে।’
এফবিআই এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে বলেও বার্তায় জানানো হয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক বিভাগ আইসিই ইতোমধ্যে অনুনমোদিত করোনা ভ্যাকসিনের সরবরাহ থামাতে কাজ করছে।
এছাড়াও, করোনা নিরাময়ে ‘বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়’ এমন পণ্য বিক্রি করায় দেশটির ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) সাতটি কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছে।
বেটার বিজনেস ব্যুরো (বিবিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে বলেছে, ‘ভ্যাকসিন অনুমোদনের পর দুর্নীতিবাজরা ভুয়া ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার মাধ্যমে অর্থ উপাজর্নের চেষ্টা করবে। তারা কৌশল খাটিয়ে রোগীদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
নিরাপদ থাকতে করণীয়
যে বিষয়ে মানুষের আগ্রহ ও যে বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকে সে বিষয় নিয়ে দুর্নীতি করার সুযোগ বেশি। মহামারিও এমন একটি বিষয়। কেননা, মহামারির সুযোগ নিয়ে দেশে দেশে অনেকে অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন।
বিবিবির মুখমাত্র ক্যাথেরিন হাট সিএনএন’কে বলেছেন, ‘এসব কেলেঙ্কারিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বাস্তবতা হলো: সপ্তাহ দুয়েক আগে যখন ভ্যাকসিন আসছে বলে জানা যাচ্ছিল তখন থেকেই আমরা সবাইকে সতর্ক করছিলাম।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা সবাইকে বলতে চাই— কেউ ফোন দিয়ে ‘কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে’ এমন সংবাদ দিলে তা এড়িয়ে চলুন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম থেকে তথ্য নিন। পরিচিত কেউ কোনো তথ্য দিলে তা যাচাই করুন, ইত্যাদি।’
‘আমরা যেহেতু জানি, এই মুহূর্তে সবাইকে এক সঙ্গে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব নয় তাই দুর্নীতিবাজরা এই সুযোগ নিবে। তারা আপনার ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে প্রলোভন দেখাবে। তারা এমনও বলতে পারে যে, এই সুযোগ হারালো তা আর পাওয়া যাবে না। তাই বলছি, সময় নিয়ে ভাবুন। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না,’ যোগ করেন ক্যাথেরিন হাট।
মহামারিতে কেলেঙ্কারি নতুন নয়
সিএনএন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এফটিসি জানিয়েছে— করোনা মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তারা ২০ হাজারের বেশি অভিযোগ পেয়েছে।
ক্ষুদে বার্তা ও রোবোটিক ফোনকলের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার কিট, ভুয়া চিকিৎসা ও মহামারিতে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব জনসাধারণকে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও, করোনায় গৃহপালিত পশু নিয়ে কেলেঙ্কারির চার হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছিল সংস্থাটির কাছে।
ক্যাথেরিন হাটের মতে, ‘দুর্নীতিবাজরা খুব ভালো করেই জানেন কিভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। প্রয়োজনে তারা ভয়-ভীতিও দেখায়। তারা জানেন, কোনটি মানুষের আগ্রহের বিষয় বা পৃথিবীতে কোন বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে।’
‘তাই এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখা ও চলমান ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ,’ মন্তব্য ক্যাথেরিনের।
Comments