কার্টুনিস্ট কিশোরকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের
কারাবন্দি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অনতিবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বুধবার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
দেশে করোনা মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর বিদ্রূপ করে গত মার্চ ও এপ্রিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘লাইফ ইন দ্য টাইম অব করোনা’ শীর্ষক কার্টুন সিরিজ প্রকাশ করেন কিশোর। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে মিথ্যা সংবাদ ও ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত মে’তে কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘রাজনৈতিক বিদ্রূপ বা কার্টুনের মাধ্যমে সরকারের নীতির সমালোচনা করা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আওতায় অনুমোদিত। এর জন্যে কাউকে অপরাধী করা উচিত নয়।’
বিবৃতি দেওয়া জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞরা হলেন— জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক অধিকার-বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কারিমা বেনুন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা-বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি আইরিন খান এবং প্রত্যেকের সর্বোচ্চ মানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার-বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি লালেং মোফোকেং।
আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অসঙ্গতি এবং এটি ব্যবহার করে কণ্ঠরোধ করার বিষয়ে বারবার গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত আদালতের শুনানিতে এখন পর্যন্ত পাঁচ বার কিশোরের জামিন আবেদন নাকচ করা হয়েছে এবং পরবর্তী শুনানির কোনো তারিখও নির্ধারণ করা হয়নি। কিশোরের ডায়াবেটিস থাকায় নিয়মিত তাকে ইনসুলিন নিতে হয় এবং তিনি করোনা জটিলতার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘করোনার সংক্রমণকালীন বিশ্বের কারাগারগুলোতে থাকা বন্দিদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে, তাদের করোনায় ক্ষতির ঝুঁকি বা মৃত্যুঝুঁকি বেশি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘কারাগারে করোনা-ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ হাজারো কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং কিশোরের জামিন আবেদন নাকচ করার কোনো ন্যায়সঙ্গত কারণ আছে বলেও মনে হচ্ছে না।’
‘কিশোরের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি যাতে না হয়, সেই প্রেক্ষাপটে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় তাকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক কিশোরকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি অভিযোগ বাতিল করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মকাণ্ডে কিশোরের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘রবার্ট রাসেল কারেজ ইন কার্টুনিং অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা কার্টুনিস্ট রাইটস নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল (সিআরএনআই)।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ‘মহামারিকালীন আহমেদ কবির কিশোরের মতো ভিন্নমত পোষণকারী শিল্পীদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই অধিকারগুলো কেবল আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুত নয়, সমালোচনামূলক নীতিগত আলোচনার ক্ষেত্রেও এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।’
‘তাদের কণ্ঠরোধ করার মাধ্যমে তাদের মানবাধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় এবং এর মাধ্যমে অন্যান্যরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন’, বিবৃতিতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:
কারাবন্দি কার্টুনিস্ট কিশোর পেলেন রবার্ট রাসেল কারেজ অ্যাওয়ার্ড
কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক গ্রেপ্তার
কিশোর ও মুশতাকের জামিন শুনানিতে অপরাগতা জানিয়েছেন ভার্চুয়াল আদালত
Comments