কুমিল্লার টাউন হল নিয়ে ২ ঘণ্টার গণশুনানি
![Kumilla.jpg Kumilla.jpg](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/very_big_201/public/feature/images/kumilla.jpg?itok=uS5WDMow×tamp=1608357790)
কুমিল্লা টাউন হলকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে হস্তান্তর করা হবে কি না তা জানতে টাউন হল মাঠে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ শনিবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ গণশুনানি চলে।
শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মান্নান ইলিয়াস। এছাড়া, এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া, জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীরসহ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সদস্যরা।
গণশুনানিতে কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আকম বাহাউদ্দীন বাহার সমাপণী বক্তব্যে শত বছরের পুরাতন টাউন হল ভেঙে নতুন টাউন হল নির্মাণের অঙ্গীকার করেন। সকাল সাড়ে এগারোটায় গণশুনানির সময় নির্ধারণ করা থাকলেও হাজী বাহার সমর্থিত নেতা-কর্মীরা সকাল নয়টা থেকেই মিছিলসহ টাউন হল মাঠে জড় হতে থাকেন।
![Kumilla-11.jpg Kumilla-11.jpg](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/news/images/kumilla-11.jpg?itok=JWDMZtuK×tamp=1608393466)
এদিন শুনানির মঞ্চ ও টাউন হল মাঠ সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী বাহার সমর্থিত নেতা-কর্মীতে ভরে যায়। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কিছু কিছু স্থানের প্রধান সড়কগুলোতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ফলে, নগরীর ঝাউতলা ও রাজগঞ্জের মতো ব্যস্ততম রাস্তাগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে।
গণশুনানিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী বাহার বলেন, ‘১৯৩৩ সালে টাউন হল ভবন নির্মাণ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৩৫ সালে। মূলত কুমিল্লার জনগণের অর্থেই এই টাউন হল নির্মিত হয়েছে। এজন্য কুমিল্লার জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে টাউন হলের ব্যাপারে।’
কিন্তু, ১৮৮৫ সালে কুমিল্লা বা তৎকালীন ত্রিপুরার কালেক্টর জেএফ স্ক্রাইনের উদ্যোগে ত্রিপুরা মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর কর্তৃক স্থাপিত টাউন হল কুমিল্লা তথা ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে শুরু করে কুমিল্লা তথা বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। তাই এই শতবর্ষী পুরাতন ভবনের অনেক অকাট্য দলিলপত্র ও তথ্য প্রমাণ থাকার পরেও গণশুনানির আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
উল্লেখ্য, দেশবরেণ্য প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ আকম যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মোবাশ্বের আলীর সম্পাদনায় ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘কুমিল্লা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ওই গ্রন্থে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহচর সুলতান মাহমুদ মজুমদারের লেখা ‘মঞ্চশিল্প ও নাটক’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু মহারাজ রাধা কিশোর মাণিক্য বাহাদুর টাউন হলের পশ্চিম অংশে মিলনায়তনের স্থায়ী মঞ্চটি তৈরি করেন। যা কেন্দ্র করেই ১৯০৮ সালে উপমহাদেশের বিখ্যাত নাট্যদল ভার্ণাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রবোধ চন্দ্র রায়।
কালের সাক্ষী এই টাউন হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল, মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, শের-ই বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি আগমন হয়েছিল।
শুধু এ ভবনটিই নয় এর মধ্যে স্থাপিত থিওসোফিকেল সোসাইটি, কুমিল্লা ক্লাব ও মিনিস্ট্রিয়াল ক্লাবও যথাক্রমে ১৮৮৯, ১৯১৭ও ১৯২০ সালে স্থাপিত। যার সবগুলোই শতবর্ষী। এ ছাড়াও, ১৯৯০ সালের দিকে কুমিল্লা সদরের এমপি হাজী বাহাউদ্দিনের একটি চারতলা মার্কেট এই টাউন হল প্রাঙ্গণেই নির্মিত হয়।
ইতোপূর্বে কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী বাহারের উদ্যোগে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক টাউন হলের বহুতল মাল্টি পারপাস ভবনের নকশা প্রস্তাবনার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ওই নকশা প্রদর্শনের পর থেকেই বিভিন্ন সংস্কৃতিকর্মী ও সুশীল সমাজ তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে নারী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ‘সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ফায়দার জন্য টাউন হল ভেঙে ফেলতে চাইছেন। ইতোপূর্বে টাউন হলে মার্কেট নির্মাণ করে দোকানের পজিশন বিক্রি করা হয়েছে। আর টাউন হল পরিচালনা কমিটি হচ্ছে স্থানীয় সংসদের অধীনে।’
তিনি বলেন আরও বলেন, ‘বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখেই টাউন হলের সংস্কার করা যেতে পারে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চাইলে কোনো শুনানি ছাড়াই টাউন হলকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে নিতে পারে।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মহাপরিচালক হান্নান মিয়া জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গণশুনানি ও টাউন হলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া, কুমিল্লা রানীর কুটি ও শচীন দেব বর্মণের বাড়ি নিয়েও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে।
টাউন হল ভাঙার বিরোধিতা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু মত দিয়েছেন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ইমেল পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কুমিল্লা টাউন হল বা বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের কাঠামো ঠিক রেখে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়াও, পশ্চিম ত্রিপুরার সামাজিক সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় সাতকথা’ টাউন হলের কাঠামো ঠিক রেখে সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা টাউন হলকে প্রত্নসম্পদ ঘোষণায় গণশুনানি
Comments