শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও
গত এক সপ্তাহ ধরে হিমালয় থেকে আসা হিম বাতাসে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের জনপদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
আজ রোববার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এসব এলাকার ওপর দিয়ে শীতল হাওয়ায় কুয়াশা কমলেও শীতের তীব্রতা কমেনি বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্।
গতকাল ও আজ পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রচণ্ড শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ (কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যান চালক) চরম বিপাকে পড়েছেন এই বিরূপ আবহাওয়ায়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় এলাকার কৃষক সমারু মোহাম্মদ বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে কুয়াশায় কিছু দেখা না গেলেও এতো শীত লাগেনি। কিন্তু, গত কয়েকদিন ধরে যেমন কুয়াশা কমেছে তেমন শীতও বেড়েছে।’
একই এলাকার কৃষি শ্রমিক হাসেম আলী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া শীতল হাওয়ায় খেতে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ কাজের পর হাত-পা জমে যাচ্ছে, মাঠে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়।’
ঠাকুরগাঁও শহরের রিকশাচালক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শীতের মধ্যে রিকশা চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া, এসময়ে যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।’
শহরের খালপাড়া এলাকার মজিরন নেছা বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে অনবরত ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করায় দু’তিনটা কাঁথা-কম্বল গায়ে দিয়েও শীত নিবারণ করা যাচ্ছে না।’
এদিকে শীতজনিত অসুস্থতায় শিশু ও বয়স্ক মানুষের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন জানান, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ১১৯ জন এবং ২৪১ জন ভর্তি আছে প্রাপ্ত বয়স্কদের ওয়ার্ডে। যাদের অধিকাংশই শীতজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন।
অন্যদিকে বহির্বিভাগেও রোগীর অতিরিক্ত চাপ দেখা গেছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ২০০ কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে, প্রাপ্তিসাপেক্ষে আরও বিতরণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘এ পর্যন্ত দশ হাজার ৮০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, পাঁচটি উপজেলায় কম্বল ও লেপ দুস্থ শীতার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রত্যেক ইউএনওকে ছয় লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আকাশে মেঘ ও কুয়াশা কমে গেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এসব এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আরও কয়েকদিন এসব এলাকায় এমন আবহাওয়া থাকতে পারে।’
Comments