রৌমারীতে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদ, সোনাভরি ও জিঞ্জিরাম নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। উপজেলার ১৫টি স্থানে অর্ধশতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও ফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার ধনার চর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে গত ১৩ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে, এখনো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্রহ্মপুত্র নদ, সোনাভরি ও জিঞ্জিরাম নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রীতিমতো বাণিজ্য করছে স্থানীয় একটি চক্র।’
‘আমি লিখিত অভিযোগ করায় বালুখেকো চক্রটি আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে,’ তিনি অভিযোগ করেন।
‘রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় একজন নেতা বালুখেকো চক্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি ইচ্ছামতো নদ-নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন,’ বলেন আব্দুল খালেক।
উপজেলার ধনার চর এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের কৃষক মফিজুল ইসলাম (৬৫) জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদের ভাঙন তীব্র হয়েছে। এ নদের তীরবর্তী মানুষের শত শত হেক্টর ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদ, শত শত বসতবাড়ি, বেড়িবাঁধের একাংশ নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদ-নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে তাদেরও ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা, আবাদি জমি ও ফলের বাগান হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে। এই মুহূর্তে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদের ধনার চর এলাকায় ড্রেজার মেশিন বন্ধে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই। এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের অপরাধে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জমাল হোসেনের দুই ছেলে আব্দুল আজিজ (২৮) ও আব্দুল আলীমকে আটক করা হয়। তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌসের ভ্রমমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়। সন্তানদের আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সুরুজ্জামাল। তিন দিনের মধ্যে সব ড্রেজার মেশিন ও পাইপ সরিয়ে নেওয়া এবং আর কখনো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন না করার মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় আ. লীগ নেতার দুই ছেলে।
তবে, আইন অমান্য করে পুনরায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ওই আ. লীগ নেত, তার ছেলে ও লোকজন।
রৌমারী উপজেলা ড্রেজার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি বাণিজ্য আলী বলেন, ‘উপজেলার ড্রেজার মেশিন মালিকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘ড্রেজার মালিক সমিতি’। এ সমিতির সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল হোসেন। তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।’
অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জমাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছেন আর এতে নদের খনন কাজও হচ্ছে বিনা খরচে।
রৌমারী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস দ্য ডেইলি স্টারকে মুচলেকার কথা স্বীকার করে জানান, মুচলেকা প্রদানকারীরা পুনরায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে কিনা সেটা তার জানা নেই।
তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানান সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-ইমরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়েছি। ব্যস্ততার কারণে তদন্তের পাচ্ছি না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Comments