‘জারোত হামরা মরি যাবার নাগছোং, কাইও এ্যাকনা কম্বলও দ্যায় না’

কনকনে শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ। খরকুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা। ছবিটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট গ্রাম থেকে আজ সোমবার সকালে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

'হামরা গরীব মানুষ হামরা প্যাটের ভোগ আর জার সহ্য করির পাং না,' বলছিলেন চরাঞ্চলের শীতার্ত সাহেরা বেওয়া (৬২)। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর কুলাঘাটের সাহেরা বেওয়া বলেন, 'জারোত হামরা মরি যাবার নাগছোং। কাইও হামার খোঁজ ন্যায় না, কাইও এ্যাকনা কম্বলও দ্যায় না। ওই বছর এ্যাকনা কম্বল পাছিনুং সেটা ছিড়ি গ্যাইছে।'

একই কষ্টের কথা জানান চরের কোহিনুর বেওয়া (৫৮)। শীত থেকে বাঁচতে এখন ভরসা খরকুটোর আগুন।

শীতের দাপটে কাহিল হয়ে পড়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের স্বাভাবিক জনজীবন। আজ সোমবার সকাল থেকে কনকনে ঠান্ডার সাথে হিমেল বাতাস মিশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঠান্ডা উপেক্ষা করে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছেন। কিন্তু শীতের দাপটে তারা বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারছেন না।

কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর কোদালকাটি এলাকার শীতার্ত আক্কাছ আলী (৬৫) জানান, 'আমগো এহেনে যে ঠান্ডা বাপু কহোন চলে না।'

'গেল বছর একনা কম্বল দিছিলো হেইডা তো নষ্ট হইয়া গ্যাছে। এহোন ঠান্ডায় মরতেছি,' বলেন তিনি।

চরের বাসিন্দারা জানান ঠান্ডার কারণে তারা জবুথবু হয়ে পড়েছেন। ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না কাজের জন্য। আয়-রোজগার করতে না পারায় সংসার চালানো কষ্টকর।

‘আমগোরে গাওত ঠান্ডা আর প্যাটোত ক্ষিধা। বিপদে আছি আমরা,’ বলেন দিনমজুর তাহের আলী (৪৫)।

ঠান্ডার কারনে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ কাজের সন্ধানে বাড়ির বাইরে যেতে না পারায় কমেছে তাদের আয়-রোজগার। অনেকেই রয়েছেন অর্ধাহারে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় খড়কুঠোর আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। ঠান্ডার কারনে গবাদি পশু পালনেও তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তাপমাত্রা রেকর্ডকিপার সুবল চন্দ্র রায় আজ সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোমবার সকাল ৬টায় এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে রাতে তাপমাত্রা আরও কম ছিল বলে তিনি জানান। 

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধনার চরের আয়েশা বেওয়া (৫৮) অভিযোগ করে বলেন, সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে কোন সহায়তা পাচ্ছেন না তারা। একটি কম্বল পেলে হয়তো শীত থেকে বাঁচতে পারতেন। ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। কোন কাজ-কর্ম করতে পারছেন না। হাতে টাকাও নেই যে তিনি বাজার থেকে একটি কম্বল কিনে ব্যবহার করবেন। ‘কেউ আংগো কম্বল সাহায্য না করলে কনকনে ঠান্ডা থাইক্যা বাঁচনের কোন উপায় তো দ্যাখছি না,’ বলেন তিনি।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-ইমরান বলেন, সরকারি বরাদ্দের ২৭০০ কম্বল পেয়েছেন কিন্তু এখনো বিতরণ শুরু করেননি। মঙ্গলবার অথবা বুধবার এসব সরকারি বরাদ্দের কম্বল দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানান। তবে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago