শীর্ষ খবর
প্রবাসে

কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো বাংলাদেশের ড. শ্যামল দাস

বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস নিউজিল্যান্ডের ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক যিনি নিউজিল্যান্ডের সম্মানজনক এ পুরস্কার পেলেন। নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বউদ্যোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে এ পুরস্কার জিতে নেন দেশটির ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল দাস।
নিউজিল্যান্ডের ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস। ছবি: লেখক

বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস নিউজিল্যান্ডের ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক যিনি নিউজিল্যান্ডের সম্মানজনক এ পুরস্কার পেলেন। নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বউদ্যোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে এ পুরস্কার জিতে নেন দেশটির ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যামল দাস। 

নিউজিল্যান্ডে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে ইথানলকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে সেই সময়ই গণমাধ্যমের নজর কাড়েন অধ্যাপক ড. শ্যামল দাস। প্রায় ১২০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়ান এই বাংলাদেশি। এবার তার সেই উদ্যোগের প্রশংসা করলো নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। পেলেন কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো পুরস্কার। 

নিউজিল্যান্ডের কিউই ব্যাংক প্রতিবছর ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার দিয়ে থাকে। যারা নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের উন্নয়নে গত এক বছর কাজ করেছেন এমন কিউইদের এ পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। একটু বলে রাখি, নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ছয়টি ক্যাটাগরিতে নিউজিল্যান্ডার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার দেয়। সেই ছয়টি ক্যাটাগরির একটি ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার।  

গত ২৩ ডিসেম্বর ডুনেডিনের কিউই ব্যাংকের লোকাল ম্যানেজার ম্যারি সুটোন ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার তুলে দেন ড. শ্যামল দাসের হাতে। করোনার কারণে এ বছর সবাইকে একসঙ্গে পুরস্কার দেয়ার পরিবর্তে প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সম্মানিত করা হয়।

নিউজিল্যান্ডে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার চাহিদার তুলনায় কম পাওয়া যাচ্ছিল তখন নিজের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি  করা শুরু করেন শ্যামল দাস। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী ড. শ্যামল দাসের নেতৃত্বে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ইথানল দিয়ে ৬০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে ফেলেন।

ড. শ্যামল দাসের নেতৃত্বের এ দলটি নিউজিল্যান্ডে যখন লকডাউন চলছিল,তখন ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় অনুমতি নিয়ে তৈরি করেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এসময় ১২০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মিটিয়ে নিউজিল্যান্ড পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সম্মুখসারীর কর্মীদের মাঝে তা বিতরণ করেন।

নিউজিল্যান্ডে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর করোনায় কোনো প্রাণহানি ঘটার আগেই ২৫ মার্চ দেশটিতে লকডাউন জারি করা হয়। নিউজিল্যান্ডে ৭ সপ্তাহ অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হয় লকডাউন। আর করোনা প্রাদুর্ভাব চলাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক  ছিল দেশটিতে। এখন অনেকটাই করোনামুক্ত নিউজিল্যান্ড। ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭২ জন আর মারা গেছেন ২৫ জন।

করোনাকালীন সময়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে কিউইদের সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানিয়ে ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি চিঠি দিয়েছেন ড. শ্যামল দাসকে। আর ‘কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো’ পুরস্কার প্রাপ্তির পর ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারলিন হায়েন এক চিঠিতে ড. শ্যামল দাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘আপনার ও আপনার ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গর্বিত।’ 

স্থানীয় এমপি ইনগ্রিড লিয়ারি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পক্ষ থেকে ড. শ্যামল দাসকে ধন্যবাদ জানান।

ফার্মাসিস্ট ড. শ্যামল দাস অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে পিএইচডি শেষ করে সেখানেই পাঁচ বছর গবেষণা ফেলো হিসাবে কাজ করেন। এরপর ২০১৩ এর জুলাইতে নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিন শহরের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে যোগ দেন ড. শ্যামল দাস। অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ফেলো হিসাবে যোগদানের আগে তিনি বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। এর আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে ফার্মেসিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। 

শিক্ষকতার দীর্ঘ এ কর্মজীবনে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ড. শ্যামল দাস। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. শ্যামল দাস ২০১৬ সালে এক্সসিলেন্স ইন টিচিং অ্যাওয়ার্ড, ২০১৭ সালে সুপারভাইজার অব দা ইয়ার অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৯ সালে এক্সসিলেন্স ইন রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এ ভূষিত হন। 

কিউই ব্যাংক লোকাল হিরো পুরস্কার পাওয়ায় ড. শ্যামল দাস তার বিভাগের সকল শিক্ষার্থী বিশেষ করে যারা তার নেতৃত্বে লকডাউনের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে সহায়তা করেছে তাদের ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ যারা তার এ স্বেচ্ছাসেবকমূলক কাজে সহযোগিতা ও সাহস জুগিয়েছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানান ড. শ্যামল দাস।

লেখক: মু. মাহবুবুর রহমান, নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক

Comments

The Daily Star  | English

3 Bangladeshis killed in Malaysia building collapse; 4 still missing

Rescuers are still searching for four missing workers believed to be pinned under the rubble where a building under construction had collapsed at about 9:45pm (local time)

1h ago