রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা, জামালপুরে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবারের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন জেলার সদর হাসপাতালসহ সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের ওপর হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আজ রবিবার সকাল থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার সকল উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া বহির্বিভাগ বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগী দেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, গত শুক্রবার হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার প্রেক্ষিতে বিএমএ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক চিকিৎসকেরা জরুরি সেবা ছাড়া সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। সেদিন রোগীর লোকজন যেভাবে হামলা, ভাংচুর ও চিকিৎসকদের মারধর করেছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পুলিশ সদস্যের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ অন্যান্য চিকিৎসকদের যেভাবে মারধর করে গ্রেপ্তার করেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি চলছে। আমাদের দাবি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম খানকে প্রত্যাহার ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার এবং কর্মস্থল নিরাপদ করার জন্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি। এই তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদের দোতলা থেকে পড়ে গুরুতর হন আহত করিমন বেগম (৬৫)। স্বজনরা তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় করিমন বেগমের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হাসপাতালের ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় অক্সিজেনের অভাবে ওই রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় রোগীর স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক চিরঞ্জিব সরকার, ইন্টার্ন চিকিৎসক হাবিবুল্লাহ, মৃত রোগীর দুই স্বজন শহিদুল ও জিহাদ আহত হন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন উপসচিব পদমর্যাদার কমকর্তাকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে।
জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, হাসপাতালে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে এবং দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন শহরের ইকবালপুর এলাকার শহিদুল (৪০) ও সাইদুর রহমান (৪২)।
পুলিশ সুপার জানান, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
Comments