‘এটি একটি সমস্যা বটে’

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে ২৮৪ দিন ধরে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সম্প্রতি হল না খুললেও পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলছেন, এখনও সবার সমন্বিতভাবে ভাবতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে ২৮৪ দিন ধরে বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সম্প্রতি হল না খুললেও পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলছেন, এখনও সবার সমন্বিতভাবে ভাবতে হবে।

পরীক্ষার সূচি প্রকাশ

গত ২৩ ডিসেম্বর স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নিতে সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ করেছে ঢাবির কলা অনুষদ। এ ছাড়া, স্নাতক অন্যান্য বর্ষের এসাইনমেন্ট ও ভাইভা নেওয়ারও সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেদিন বিভাগ চেয়ারম্যানদের এক সভায় পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়।

অনুষদ থেকে ইতোমধ্যে সব বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করার জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস বরাবর আবেদন করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্নাতক সপ্তম সেমিস্টার ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা সম্পন্ন করার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমএ প্রথম সেমিস্টারের কোর্স ফাইনাল, বিএ (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ সপ্তম সেমিস্টারের কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা ২০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিতে বলা হয়েছে।

চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুধু স্নাতক সপ্তম সেমিস্টার ও মাস্টার্স অর্থাৎ টার্মিনাল ডিগ্রি প্রাপ্তির কাছাকাছি যারা রয়েছে, তাদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করে গত ২৬ ডিসেম্বর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস বরাবর আবেদন করা হয়। চিঠিতে উল্লেখিত তারিখ কোনো চূড়ান্ত তারিখ নয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের অনুমোদনের পর বিভাগগুলো শিক্ষার্থী ও অনুষদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ ঠিক করবে।’

তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যথায় আপাতত পরীক্ষা নেওয়ার মতো মনোভাব কর্তৃপক্ষের ছিল না।

‘স্নাতক অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু এসাইনমেন্ট (মিডটার্ম পরীক্ষার পরিবর্তে) ও অনলাইন ভাইভার সম্ভাব্য তারিখ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

ইতিহাস বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘প্রতি ফ্লোরে শুধু এক বিভাগের পরীক্ষা, পরীক্ষার জন্য পুরো কলা অনুষদের ক্লাসরুম ব্যবহার, একই সময়ে অন্যূন ২০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ও একটি কক্ষে ধারণ ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর আসন ব্যবস্থা করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়।’

Raju.jpg
হল খুলে পরীক্ষা নেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো রাজু ভাস্কর্যের নিচে অবস্থান করছে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

আবাসিক হল খুলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের নিচে অবস্থান করছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা।

তিন দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো তাদের এ কর্মসূচি চলছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের কর্মী মোহাম্মদ তারিকুল।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘হল খুলে না দিলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়বেন। হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি আমাদের আরও তিনটি দাবি আছে। তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষার ঘোষণা না দিয়ে প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষার্থীদের সময় দিতে হবে। ডিভাইস ও নেটওয়ার্কের কারণে অনেকেই অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য ডিভাইসের ব্যবস্থা ও যাদের সামর্থ্য নেই তাদেরকে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে সাহায্য করতে হবে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আজ পঞ্চম দিনের মতো আমাদের কর্মীরা অবস্থান করছেন। শীতের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা দিনে-রাতে সেখানে আছেন। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা রাজু ভাস্কর্যে বা অন্য জায়গায় তাঁবু টানিয়ে রাত কাটাবেন। হল না খুললে শিক্ষার্থী থাকবেন কোথায়?’

তিনি বলেন, ‘আবাসিক হলে করোনা হতে পারে, পরীক্ষার হলেও হতে পারে। করোনা যেকোনো জায়গাতেই ছড়ায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জেলা থেকে এক জায়গায় এসে পরীক্ষা দেবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি পরীক্ষা নেওয়া যায়, তাহলে আবাসিক হলেও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল না খুলে পরীক্ষা নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্ত এবং পরীক্ষা বয়কট করবে।’

হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ বলেছে, ডিপার্টমেন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের উপরই তাদের আবাসনের দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করার কথা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় দায় এড়াচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েই শঙ্কিত।’

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়া শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রকে ক্ষুণ্ণ করে। আমরা কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে ছাত্রলীগের অবস্থান তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। তখন তারা আমাদের দাবির সঙ্গে নৈতিকভাবে একমত পোষণ করে বলে জানিয়েছে।’

‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে প্রত্যাশা করছি। আমরা বলেছি যে, কেবল পরীক্ষার্থীদের জন্য যেন হল খুলে দেওয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করে থাকার সুযোগ রয়েছে। সবার জন্য একেবারেই উন্মুক্ত করে দিতে হবে তা নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে একটি সুন্দর রূপকল্পের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে হল খুলতে হবে’, বলেন তিনি।

উপাচার্য ও প্রক্টর যা বললেন

হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। হল খোলার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্ররা। কী ভাবছেন?

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহামারি চলছে, এ অবস্থায় যেভাবে সরকারি সিদ্ধান্ত হয়, সেভাবেই চলবে।’

এভাবে পরীক্ষা নেওয়া হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো যাবে?

‘এটি একটি সমস্যা বটে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আপনার মতামত কী?

‘দেখা যাক। মহিমারিকালের অনেক সমস্যা আছে। এখনও সবার সমন্বিতভাবে ভাবতে হবে।’

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলন করছে কেন সেটি তাদের জিজ্ঞেস করুন। রাজনীতি আর শিক্ষা এক নয়। শিক্ষাকে গুরুত্ব দিলে অবস্থান নিতে হয় না। রাজনীতিকে গুরুত্ব দিলে নিতে হয়।’

‘শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে চেয়ে যথেষ্ট আবেদন করেছে। পরীক্ষা কী করে নেওয়া যায়, এই ধরনের কোনো গঠনমূলক পরামর্শ বা আলোচনা নেই, এটি নিয়ে রাজনীতি করে উচ্চ শিক্ষার মেরুদণ্ড কীভাবে নষ্ট করা যায়, সেজন্য সবার তৎপরতা দেখি’, বলেন তিনি।

প্রক্টর বলেন, ‘কারও কোনো ভালো পরামর্শ থাকলে সেটি দেবেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি উন্মুক্ত জায়গা। পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে, প্রতিটি সংগঠন তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। কোনো বিভাগে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কোনো দিনক্ষণ ঠিক করে দেওয়া হয়নি। প্রতিটি বিভাগে পরীক্ষা নেওয়ার মতো বাস্তবতা যখন তৈরি হবে, একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার বাইরে থাকবে না যখন, তখন পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে সীমিত পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেগুলো হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলেও আমাদের দেবেন।’

‘কে কোথায় চাটাই পেতে বসে গেল, সেটি একটি মানববন্ধন হয়ে গেলে, প্রতিবাদ হয়ে গেল! হাজার হাজার ছাত্রকে নিয়ে ভাবতে হয় আমাদের’, যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করুন, এই অবস্থানকারী ছাত্রদের উদ্দেশ্য কী? রাজুতে অবস্থান নিয়ে তারা কোন উদ্দেশ্য হাসিল করছে, তা মিডিয়া এবং জাতির সামনে বলতে। তাদের বলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরে বক্তব্য দেব।’

আরও পড়ুন:

শিক্ষার্থীরা থাকবেন কোথায়, প্রশ্নের উত্তরে ঢাবি উপাচার্য ‘আমার জানা নেই’

‘আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অমানবিক’

Comments

The Daily Star  | English

Age limit for govt job entry: Panel suggests 35yrs for men, 37 for women

A government committee has recommended raising the maximum age limit for applying for public service jobs to 35 years for male candidates and 37 years for female applicants..The five-member committee, formed to review the feasibility of extending the age limit for applying for government j

25m ago