ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামিনে মুক্ত

সরকারি গাড়িতে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হবার ১১ দিন পর আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সরকারি গাড়িতে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হবার ১১ দিন পর আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নাজমুল আজম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করলেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মামলার দ্বিতীয় আসামী বিবেচনায় তাকে আদালত জামিন দিয়েছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান যে তিনি জব্দ করা ফেনসিডিলের বিষয়ে কিছু জানতেন না। তিনি শিবগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে তার পূর্বপরিচিত ওহিদুজ্জামান লাজুক নামের একজনকে গাড়িতে তোলেন। লাজুকই ফেনসিডিল বহন করছিলেন। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দুজনকেই গ্রেপ্তার করেন।

পিপি জানান, মাদকসহ একসঙ্গে গ্রেপ্তার হলেও ওহিদুজ্জামান লাজুক জামিন পাননি। মো. নুরুজ্জামান ভর্তি আছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নাদিম সরকার জানান, গত বুধবার বুকের ব্যথা নিয়ে নুরুজ্জামানকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে তিনি হাসপাতালের বাথরুমে গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। টের পেয়ে জেল পুলিশ ও হাসপাতালের কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করেন। সেদিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

যেভাবে আটক হন নুরুজ্জামান

রাজশাহীর একটি সরকারি গাড়িতে ফেনসিডিল বহন করা হচ্ছে— এমন খবর পেয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা ব্রিজের টোল প্লাজায় তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেন। রাত সাড়ে ৮টায় মো. নুরুজ্জামান যখন তার সরকারি পাজেরো গাড়িতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা শিবগঞ্জ থেকে রাজশাহী ফিরছিলেন তখন তাকে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গাড়িতে চালকের পাশের সিটে ছিলেন শিবগঞ্জ উপজেলার আব্বাস বাজার গ্রামের ওহিদুজ্জামান লাজুক (৩৮)। তার পায়ের কাছে কোমল পানীয়র পাঁচটি বড় বোতলে ছিল ৬ দশমিক ৮ লিটার ফেনসিডিল। নুরুজ্জামান নিজেকে সরকারের উপসচিব এবং লাজুককে ওষুধের দোকানের কর্মচারী ও বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাজুক কোনো ওষুধের দোকানের কর্মচারী নন। তিনি মাদক চোরাকারবারি। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মাদকসেবীদের বাড়িতে তিনি মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন।

তারা আরও বলেন, জব্দকৃত ফেনসিডিলসহ লাজুককে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে নেওয়া হয়। নুরুজ্জামানের পরিচয় নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সার্কিট হাউসে নেওয়া হয়েছিল। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তারা নুরুজ্জামানকে রেখে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সার্কিট হাউস ত্যাগ করতে চাপ দেন।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্লাহ কাজল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নুরুজ্জামান সার্কিট হাউসে থাকাকালে সার্কিট হাউজের গেটগুলোতে আমাদের কর্মকর্তারা সারা রাত অবস্থান করেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা তাকে (নুরুজ্জামান) ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন।’

তবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি যে, আমরা গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছি। আইনের নিজস্ব গতি রয়েছে। আইনের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার আমার কোনো এখতিয়ার নেই।’

উল্লেখ্য, মো. নুরুজ্জামানের বাড়ি পাবনা জেলায়। তিনি ২৫তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার। ২০১৫ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পুঠিয়ায় থাকার সময় তিনি প্রায়ই মাদকদ্রব্য কিনতে সরকারি গাড়িতে বাঘা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যাতায়াত করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন:

রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মাদকসহ আটক

Comments

The Daily Star  | English
14-party fragile as AL ‘shifts rightwards’

Seat-Sharing: 14-party alliance meeting tomorrow

Ever since the Election Schedule was announced on November 15, there is growing unease in the alliance over which partner gets to vie for how many constituencies, sources say

42m ago