অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে সিরিজে ফিরল ভারত
৩৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার বিব্রতকর অভিজ্ঞতা নিয়ে এই টেস্টে নেমেছিল ভারত। ছিলেন না দলের সেরা ক্রিকেটার ও নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। চোটে ছিটকে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি, ম্যাচের মধ্যেই চোটে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায় পুরোটাই পাওয়া যায়নি উমেশ যাদবকে। তবু আজিঙ্কা রাহানের সামনে থেকে দেওয়া নেতৃত্ব, অসাধারণ সেঞ্চুরি, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা, ইতিবাচক মানসিকতা আর বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যে মেলবোর্নে তাদের কাছে পাত্তা পেল অস্ট্রেলিয়া।
মাত্র ৭০ রানের লক্ষ্য পেয়ে বক্সিং ডে টেস্ট ৮ উইকেটে অনায়াসে জিতে নিয়েছে ভারত। ওই রান তুলতে খেলতে হয়েছে কেবল ১৫.৫ ওভার। দারুণ এই জয়ে চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজেও ১-১ সমতা এনেছে সফরকারীরা।
মঙ্গলবার চতুর্থ দিন যেন ছিল আনুষ্ঠানিকতা সারার। ম্যাচ জেতার ক্ষেত্র আগের দিনই তৈরি করে রেখেছিল ভারত। হাতে শেষ ৪ উইকেট নিয়ে মাত্র ২ রানের লিড নিয়েছিল অজিরা। ওই চার উইকেট নিয়েও অবশ্য সকালবেলা বেশ কিছুটা লড়েছে তারা।
৬ উইকেটে ১৩৩ নিয়ে নামা অজিরা এদিন প্রথম উইকেট হারায় ১৫৬ রানে। ২২ করা প্যাট কামিন্সকে তুলে নেন পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত বল করা জাসপ্রিট বুমরাহ। পরে মিচেল স্টার্ককে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ক্যামেরন গ্রিন। ৪৫ করা গ্রিনকে ফেরান অভিষিক্ত মোহাম্মদ সিরাজ।
মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউডরা এরপর টেনেটুনে দলকে নিতে পেরেছিলেন দুশোর ঘরে। তবে সেটা ছিল একদম মামুলি। ৭০ রানের লক্ষ্যে তেমন কোন সমস্যাই হয়নি ভারতের।
সহজ রান তাড়ায় সাবলীল শুরু এনে দেন তরুণ ওপেনার শুভমান গিল। তার সঙ্গে অবশ্য তাল রাখতে পারেননি মায়াঙ্ক আগারওয়াল। দলের ১৬ রানে ৫ রান করা এই ডানহাতি স্টার্কের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। চেতশ্বর পূজারা এসেই কামিন্সের বলে ক্যাচ দেন গালিতে।
১৯ রানে ২ উইকেট। আবার কোন বিপদ? তেমন শঙ্কা টেকেনি ২ মিনিটিও। রাহানে নেমেই ব্যাটে-বলের সংযোগে বুঝিয়ে দেন তেমন কিছু হওয়ার আর সুযোগ নেই এবার। ৪০ বলে ২৭ করা অপরাজিত থাকা অধিনায়কই নিয়েছেন উইনিং রান। ছোট রান তাড়ায় ৩৬ বলে ৩৫ করে গিল জানান দিয়েছেন রোহিত শর্মা ফিরলে তার সঙ্গী হতে তৈরি তিনি।
ভারতের এই ম্যাচ জেতার মঞ্চ তৈরিতে অবদান বেশ কজনের। অজিদের প্রথম ইনিংস মাত্র ১৯৫ রানে থামিয়ে দিতে অগ্রণী ছিলেন বুমরাহ আর রবীচন্দ্রন অশ্বীন। ৫৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন বুমরাহ। পুরো সিরিজে এখনো পর্যন্ত চোখ ধাঁধানো বল করা অশ্বীন নেন ৩৫ রানে ৩ উইকেট।
এরপর ভারতকে বড় লিড পাইয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব রাহানের। ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি তুলেছেন ভীষণ চাপের মধ্যে। তার ১১২ রানের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজার কার্যকর ৫৭ আর গিলের ৪৫ ভারতকে নিয়ে যায় তিনশো ছাড়িয়ে।
দ্বিতীয় ইনিংসে উমেশ ৩.৩ ওভার বল করে ১ উইকেট নিয়ে পেশির টানে বেরিয়ে যান। কিন্তু তার অভাব টের পেতে দেননি বাকিরা। দুই স্পিনার নেন ৪ উইকেট। বুমরাহ (২/৫৪)-সিরাজ (৩/৩৭) মিলে তুলেন ৫ উইকেট। এতেই ম্যাচ চলে আসে হাতের মুঠোয়।
৭ জানুয়ারি সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে নামবে দুদল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ১৯৫
ভারত প্রথম ইনিংস: ৩২৬
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: ১০৩.১ ওভারে ২০০ (আগের দিনের ৬৬ ওভারে ১৩৩/৬) (ওয়েড ৪০, বার্নস ৪, লাবুশানে ২৮, স্মিথ ৮, হেড ১৭, গ্রিন ব্যাটিং ৪৫, পেইন ১, কামিন্স ব্যাটিং ২২, স্টার্ক ১৪, লায়ন ৩, হ্যাজেলউড ১০ ; বুমরাহ ২/৫৬, যাদব ১/৫, সিরাজ ৩/৩৭, অশ্বিন ২/৭১, জাদেজা ২/২৮)
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৭০) ১৫.৫ ওভারে ৭০/২ (মায়াঙ্ক ৫, গিল ৩৫*, পূজারা ৩, রাহানে ২৭* ; স্টার্ক ১/২০, কামিন্স ১/২২, হ্যাজেলউড ০/১৪, লায়ন ০/৫, লাবুশানে ০/৯)
ম্যাচ সেরা: আজিঙ্কা রাহানে।
সিরিজ: চার ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতা।
Comments