কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে ঠান্ডায় কাবু ছিন্নমূল মানুষ ও চরবাসী
শৈত্যপ্রবাহে কাবু হয়েছে উঠেছে উত্তরের সীমান্তবর্তী ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর তীরবর্তী কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জনজীবন। সবচেয়ে বেশি অস্থির হয়ে উঠেছেন ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে বসবাসকারীরা ও ছিন্নমুল মানুষ। ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খেতের সবজি ও বোরো ধানের বীজতলা।
কনকনে ঠান্ডার আর কুয়াশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল বাতাস। কাজের সন্ধানে মানুষজন ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না। ঘরে বসেও ঠান্ডা নিবারণ করতে পারছেন না তারা। কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা ঠান্ডা উপেক্ষা করে খেতে কাজ করলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না। খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাঁ দিয়েও ঠান্ডা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না শীতার্ত ছিন্নমূল মানুষগুলো।
‘হামাক আর জারের জ্বালা সহ্য হবার নাইগছে না। জারের জইন্যে হামরাগুলা এ্যাকনা কিছু কইরবার পাবার নাগছোং না’, বলছিলেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর চর গোবর্ধানের শীতার্ত জুলেখা বেওয়া (৫৮)। তিনি আরও বলেন, ‘জারের জইন্যে হামরাগুলা ঘরের বাইরোক বেরবার পাবার নাগছোং না। হামারগুলার কম্বলও নাই।’
‘নড়ি-খেরোত আগুন দিয়াও গায়ের জার যাবার নাইগছে না। কাজও কইরবার পাবার নাগছোং না’, জানালেন কৃড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর চর সোনাই গাজীর দিনমজুর সালেমান মিয়া (৫৫)। তিনি আরও বলেন, ‘হামাকগুলাক কাইও কম্বলও দিবার নাইগছে না। জার সহ্য করি খ্যাতোত গেইলে জারের ঠ্যালায় ওটে না টিসটায় যায় না।’
শৈত্যপ্রবাহ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠায় চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে-খাওয়া দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষগুলো। নদী তীরবর্তী এলাকায় ঠান্ডার প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। ঠান্ডায় নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চরাঞ্চলে অধিকাংশ শীতার্ত মানুষের শীতবস্ত্র না থাকায় চরম কষ্টেই দিন কাটাচ্ছেন তারা।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শীত নামার পরপরই শীতার্ত চরাঞ্চলের মানুষ, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের শীতার্ত দুস্থদের মাঝে সরকারি সহায়তার শীতবস্ত্র ও খাদ্য সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তি শীতার্ত মানুষকে সহায়তা করছে।
তবে, শীতার্ত দুস্থরা জানিয়েছেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল এবং দুর্গম চরগুলোতে এ সহায়তা পৌঁছায়নি।
Comments