২০২০ সালে হত্যার শিকার ৫০ সাংবাদিক: আরএসএফ
পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন সাংবাদিক। মঙ্গলবার রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলার ঘটনা বাড়তে থাকা উদ্বেগজনক।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে নিহত সাংবাদিকের মধ্যে ৮৪ শতাংশকে সরাসরি তাদের কাজের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্য করেই হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিককে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদনে পাঁচটি দেশকে সাংবাদিকতার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক ও মেক্সিকো।
আরএসএফ জানিয়েছে, ২০২০ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৩৮৭ সাংবাদিক আটক, জিম্মি বা নিখোঁজ হয়েছেন।
এ বছর মেক্সিকোতে দৈনিক এল মুন্ডোর সাংবাদিক জুলিও ভালদিভিয়া রদ্রিগেজকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। পশ্চিমের এলাকা আকাপুলকোতে স্থানীয় নিউজ ওয়েবসাইট পুনতো এক্স পুনতো নোতিসিয়াসের সম্পাদক ভেক্টর ফার্নান্দো আলভারেজ শ্যাভেজের মরদেহের টুকরো টুকরো অংশ পাওয়া যায়।
ভারতে ‘রাষ্ট্রীয় স্বরূপ’ পত্রিকার সাংবাদিক রাকেশ নির্ভীক সিংকে ডিসেম্বর মাসে উত্তর প্রদেশের নিজ বাড়িতে জীবিত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। স্থানীয় এক কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের তামিলনাড়ু রাজ্যের টেলিভিশন সংবাদদাতা ইসরাভেল মোজেসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ইরানে আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আমাদনিউজ ওয়েবসাইট ও টেলিগ্রাম নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক রুহুল্লাহ জামকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গত ৩০ বছরে দেশটিতে এই প্রথম কোনও সাংবাদিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।
স্থানীয় দুর্নীতি বা সরকারি তহবিলের অপব্যবহারের ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে ২০২০ সালে ১০ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আরএসএফ। এছাড়াও সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধের ক্রিয়াকলাপের অনুসন্ধান করতে গিয়ে মারা গেছেন চার জন, বিক্ষোভ কিংবা আন্দোলনের রিপোর্ট করতে গিয়ে মারা গেছেন সাত জন সাংবাদিক।
ইরাকে বিক্ষোভের রিপোর্ট করার সময় বন্দুকধারীরা মাথায় গুলি করে তিন সাংবাদিককে হত্যা করে। এছাড়াও ইরাকের উত্তরের কুর্দিস্তান অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ থেকে পালানোর সময় এক জনের মৃত্যু হয়।
নাইজেরিয়াতে, দুজন সাংবাদিক বিক্ষোভের মধ্যে সহিংসতার শিকার হন। পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভের রিপোর্ট করতে গিয়ে তারা হামলার মুখে পড়েন।
কলম্বিয়াতে পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ ও সামরিক সদস্যের সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ মিছিল থেকে রিপোর্ট করার সময় একটি কমিউনিটি রেডিও স্টেশনের এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৫০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, তার আগের বছর ২০১৯ সালে দায়িত্ব পালন করতে ৫৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছিলেন।
আরএসএফ বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর কিছু কম সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। এ বছর কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আগের তুলনায় কমসংখ্যক সাংবাদিক মাঠে কাজ করেছেন।
২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়ানোর প্রথম তিন মাসের মধ্যে অনেক সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। মহামারির প্রথম তিন মাসে আটককৃত নারী সাংবাদিকের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়াও মহামারি সম্পর্কিত রিপোর্টের সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তার হওয়া ১৪ সাংবাদিক এখনও কারাগারে আছেন।
আরএসএফ আরও জানায়, করোনার কারণে এ বছর কয়েকশ সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সরাসরি তাদের পেশার সঙ্গে কয়েকজনের মৃত্যুর যোগসূত্র আছে।
রাশিয়া, মিশর ও সৌদি আরবে এ ধরনের তিনটি ঘটনার কথা জানিয়েছে আরএফএস। ওই সাংবাদিকদের তাদের কাজের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তারা কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হন ও পর্যাপ্ত চিকিত্সা সেবার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টোফি ডিলোরি জানান, ‘বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের উপর সহিংসতা বেড়েছে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে সাংবাদিকরা কেবল তাদের পেশাগত ঝুঁকির শিকার। কিন্তু দেখা গেছে, সংবেদনশীল বিষয়গুলো অনুসন্ধান বা রিপোর্ট করতে গিয়েই সাংবাদিকরা দিন দিন লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। যে কারণে তাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে অর্থাৎ রিপোর্ট করা, জনগণকে জানানো- এই অধিকার তাদের আছে, এটা সবারই অধিকার।’
Comments