২০২০: কেমন ছিল দেশের সংগীতাঙ্গন

করোনা মহামারির কারণে থমকে আছে সারাবিশ্ব। ২০২০ সালে দেশের সংগীতাঙ্গন থমথমে ছিল। চলতি বছরের মার্চ থেকে প্রায় আট মাস বন্ধ ছিল সব ধরনের কনসার্ট। ফলে অনেক মিউজিশিয়ান, সাউন্ড ব্যবসায়ী, কণ্ঠশিল্পী বদলে ফেলেছেন তাদের দীর্ঘদিনের পেশা।

নতুন গান প্রকাশের সংখ্যও কমেছে বছর জুড়ে। করোনাকালে গীতিকবি, সুরকার, কণ্ঠশিল্পীরা নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সংগঠন গড়ছেন।

শ্রোতাপ্রিয় শিল্পীদের গান কাভার করা নতুন প্রজন্মের শিল্পীর সংখ্যা বেড়েছে। বছরের শেষের দিকে কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী কনসার্টে অংশ নিতে শুরু করেছেন। তবে সবকিছু মিলিয়ে সংগীতাঙ্গনের অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না।

চলতি বছরে কন্ঠশিল্পীদের গানের সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই ছিল সীমিত। সংগীতে সারা বছরের আলোচিত-সমালোচিত কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো।

ভিউয়ের হিসাবে এগিয়ে থাকা গান

জানুয়ারির প্রথমদিকে প্রকাশিত হয়েছে মিনারের ‘কেউ কথা রাখেনি’ শিরোনামের একটি গান। গানটির ভিউ বর্তমানে দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। এটি প্রকাশিত হয়েছিল শিল্পীর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে।

কণ্ঠশিল্পী মনির খানের ‘অঞ্জনা ২০২০’ গানটি ইউটিউবে শ্রোতারা শুনেছেন ১ কোটির বেশি। গানটির কথা ও সুর করেছেন মিল্টন খন্দকার।

কণ্ঠশিল্পী ইমরান অডিও, চলচ্চিত্র দুই মাধ্যমেই শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। ইমরান ও কোনালের দ্বৈতকণ্ঠে 'নবাব এলএল বি' ছবির ‘বিলিভ মি’ গানটি বেশ আলোচিত হয়েছে। অডিও মাধ্যমে ইমরানের ‘জানি পাবো না’ গানটিও শ্রোতারা পচ্ছন্দ করেছেন। এটি লিখেছেন স্নেহাশীষ ঘোষ।

ভারতের জি বাংলা সারেগামাপার মাধ্যমে আসা নোবেল এর গাওয়া দুইটি গান ‘তামাশা’ ও ‘অভিনয়’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে আহমেদ হুমায়ুনের সুরে আহমেদ রিজভীর লেখা ‘অভিনয়’ ইউটিউবে ৪২ লাখের বেশি শ্রোতা শুনেছেন।

মাহদি সুলতান নামের নতুন এক গায়কের ‘মন বলে তুই শোন’ গানটির ভিউ দেড় কোটির বেশি। এতে মাহদি সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে আছেন প্রীতি শেখ।

সালমার গাওয়া 'রঙিলা বাড়ই’ মিউজিক ভিডিওটি ইউটিউবে শ্রোতারা শুনেছেন ১ কোটি ৩৬ লাখের বেশি।

তানজীব সারোয়ারের গাওয়া ‘ডুবে ডুবে’ শুনেছেন ১ কোটির বেশি শ্রোতা।

প্রীতম হাসানের গাওয়া ‘ভেঙে পড়ো না এভাবে’ গানের মিউজিক ভিডিওটি ইউটিউবে ৩০ লাখ শ্রোতা দেখেছেন।

প্রশংসিত গান

প্রশংসিত গানের তালিকায় রয়েছে কবীর সুমনের কথা ও সুরে আসিফ আকবরের গাওয়া 'সিরিয়ার ছেলে’, প্রিন্স মাহমুদের সুরে তানজির তুহিনের গাওয়া ‘আলো’, অর্নবের ‘চোরাকাঁটা’, মিলার ‘এইসসালা', কাজী শুভর ‘কলঙ্ক’ এবং ঐশীর ‘দম দাও’ ও  ‘মেঘের বাড়ি’।

আইয়ুব বচ্চুর গান সংরক্ষণ

চলতি বছরে সংগীতে আশা জাগানিয়া সংবাদ ছিল ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বচ্চুর মৃত্যুর দুই বছর পর ২০২০ সালের আগস্টে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে তার ২৭২টি গান। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে রয়েছে এই শিল্পীর কনসার্ট ও দুর্লভ সব মুহূর্তের ভিডিও। এই প্রথম কোনো শিল্পীর নামে এমন উদ্যোগ নিলো সরকার।

নতুন গান মঞ্চে আর গাইবেন না ফেরদৌস ওয়াহিদ

বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ আগামীকাল ৩১ ডিম্বেরের পর থেকে আর কোনো নতুন গান করবেন না। মঞ্চেও গান করতে দেখা যাবে না তাকে। চলতি মাসেই তিনি তার এমন সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

সুরকার সাবিনা ইয়াসমিন

কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন প্রথমবারের মতো সুরকার হিসেবে প্রকাশিত হলেন। তিনি প্রখ্যাত অভিনেত্রী সারাহ কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্রের সবগুলো গানই সুর করেছেন।

গান বিতর্ক চলমান

‘আইপিডিসি আমাদের গান’ শিরোনামের আয়োজনে ‘সর্বত মঙ্গল রাধে’ গানটি  চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের কণ্ঠে প্রকাশের পরই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ও প্রশংসিত হয়। গানটির কপিরাইট দাবি করা হয়েছে সরলপুর ব্যান্ডের পক্ষ থেকে। তবে এর মালিকানা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলমান।

যাদের হারিয়েছি

সুরকার ও সংগীত পরিচালক আজাদ রহমান গত ১৬ মে চলে যান না ফেরার দেশে। ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার, সংগীত-পরিচালক ছিলেন তিনি।

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর মারা যান ৬ জুলাই। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পীর কালজয়ী গানের তালিকায় রয়েছে: ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ ইত্যাদি।

বরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার আলাউদ্দিন আলী মারা গিয়েছেন ৯ আগস্ট। তিনিও আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’ ও ‘যোগাযোগ’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার কর্ণধার সেলিম খান মারা যান ১০ ডিসেম্বর।

সংগীত পরিচালক সেলিম আশরাফ মারা গেছেন ২ মার্চ। তার সুরে উল্লেখযোগ্য দুটি গান হলো ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’ ও ‘এই যাদুটা যদি সত্যি হয়ে যেতো’।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago