নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণ: ২৯ জনের বিরুদ্ধে সিআইডির অভিযোগপত্র

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে কোর্ট পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র হস্তান্তর করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বিস্ফোরণে টুকরো টুকরো হয়ে যায় মসজিদের থাই গ্লাস। ছবি: সনদ সাহা

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে কোর্ট পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র হস্তান্তর করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আগামী ৩ জানুয়ারি এ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক বাবুল হোসেন ১৫ পাতার অভিযোগপত্র ও ২৭ ধরনের আলামত জমা দেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৫ পাতার অভিযোগপত্রে চার্জশিটে ২৭টি আলামত দেখানো হয়েছে। ৩ জানুয়ারি এ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ অভিযোগপত্র নিয়ে শুনানি হবে।’

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেলেও সরকারি অনুমতিতে তাদের অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট প্রদান করা হবে। যে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ২৬ জন মসজিদ কমিটিতে সম্পৃক্ত। বাকি তিনজন ডিপিডিসির মিটার রিডার ও দুজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। যার মধ্যে ২৫ জনকে পলাতক ও ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

অভিযোগপত্রে বিস্ফোরণের কারণ

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সিআইডির তদন্তে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটন করা হয়। ঘটনার আগে থেকে প্রায় তিন মাস ধরে মসজিদের পাশে তিতাস গ্যাস পাইপের লিকেজ হতে গ্যাস বের হয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হতে থাকে। বাধাহীনভাবে গ্যাস বের হয়ে মসজিদ গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ঘটনার ৭-৮ দিন আগে থেকে গ্যাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে মুসল্লিরা মসজিদ কমিটিকে জানায়। কিন্তু মসজিদ কমিটি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ঘটনার দিন এশার নামাজের সময় বৈধ বিদ্যুৎ লাইন চলে গেলে ম্যানুয়াল চেঞ্জওভারের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হলে বিদ্যুতের স্পার্ক হয়। তখন বিদ্যুতের স্পার্ক ও মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের সমন্বয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও জানান, মসজিদ কমিটির সঠিকভাবে মসজিদ পরিচালনায় অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও মুসল্লিদের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো. লিমিটেডের (ডিপিডিসি) মিটার রিডিং কালেক্টর ও ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, ঝুঁকিপূর্ণভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কো. লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘটনাস্থল এলাকার তিতাস গ্যাসের দায়িত্বে থেকে দায়িত্বে অবেহলা, গ্যাস লাইনের সঠিকভাবে তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, গ্যাস লাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন-স্থানান্তর করার কারণে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

যারা অভিযুক্ত

অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত মসজিদ কমিটির ২৬ জন হলেন- আব্দুল গফুর, মো. সামসুদ্দিন সরদার, মো. শামসু সরদার, মো. অসিমউদ্দিন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল, মো. নাঈম সরদার, তানভীর আহমেদ, মো. আল আমিন, মো. আলমগীর সিকদার, মাওলানা আল আমিন, সিরাজ হাওলাদার, নেওয়াজ মিয়া, নাজির হোসেন, আবুল কাশেম, আবদুল মালেক, মনিরুল, স্বপন মিয়া, আসলাম আলী, আলী কাজল মিল্কি, কাইউম, মামুন মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, বশির আহমেদ হৃদয়, রিমেল।

এদের মধ্যে গত ৩০ অক্টোবর রাতে তল্লার নিজ বাসা থেকে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুরকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও তিন জন হলেন- আরিফুর রহমান, মোবারক হোসেন ও রায়হানুল ইসলাম। এরমধ্যে আরিফুর রহমান ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ পূর্ব অঞ্চলের মিটার রিডার, রায়হানুল ও মোবারক হোসেন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। তাদের মধ্যে মোবারক হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

বাদ পড়লেন তিতাসের আট জন

তিতাস গ্যাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী সহকারী এস এম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, কর্মী ইসমাইল প্রধান, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া, সিনিয়র উন্নয়নকারী আইউব আলী ও সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী রানা আকবর হায়দারের নেতৃত্বে দুটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। দুটি কমিটিই তাদের প্রতিবেদনে অগ্নিকাণ্ডে তিতাসের কর্মকর্তাদের কোনোরকম সম্পৃক্ততা পায়নি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে তিতাস। একইসঙ্গে তাদের কোম্পানির চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে। গত ৫ অক্টোবর থেকে তিতাসের আট কর্মকর্তা কাজে যোগ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টায় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও শিশুসহ ৩৯ জন দগ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত ভার সিআইডিকে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago