রোহিঙ্গা আলোকচিত্রী আবুল কালামের মুক্তি দাবিতে ৫০ নাগরিকের বিবৃতি
তরুণ প্রতিভাবান রোহিঙ্গা আলোকচিত্রী আবুল কালামের মুক্তি দাবি করছেন ৫০ জন বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চলচ্চিত্রকার, আলোকচিত্রী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংস্থা।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী ও রোহিঙ্গা শরণার্থী আবুল কালাম কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে ভাসানচরের দিকে যাওয়া বাসগুলোর ছবি তুলতে বের হন। তাকে প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ক্যাম্প ২ডব্লিউ ব্লক ডি৫-এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে নেওয়া হয় এবং আরও পরে কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করা হয়। জানা গেছে, ধরে নেওয়ার পরে তাকে মারধর করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বর শেষ বিকাল পর্যন্ত আবুল কালামকে কুতুপালং পুলিশ ব্যারাকে আটকে রাখা হয়। বাংলাদেশি আইন অনুযায়ী, পুলিশি তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে হাজির করতে হবে। আবুল কালামের ক্ষেত্রে এটা মানা হয়নি এবং এই বিজ্ঞপ্তি লেখা পর্যন্ত তিনি ৬০ ঘণ্টার বেশী সময় হাজতে আছেন। স্পষ্টতই এই ঘটনাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানকে এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ (৫৫ ডিএলআর ৩৬৩) এর নির্দেশনাকে লঙ্ঘন করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ছবি তোলা কোনো দণ্ডনীয় অপরাধ নয়। আবুল কালাম ভাসানচরের দিকে রওনা দেওয়া বাসগুলোর ছবি তুলছিলেন। এই কাজটি তিনি সর্ব সাধারণের চলাচলের স্থানে করছিলেন, যদিও সেটা একটা শরণার্থী ক্যাম্প। ভাসানচরে স্থানান্তরের ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকারের একটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত কার্যক্রম। কোনোভাবেই এটা কোনো গোপন ঘটনা নয়, কারণ এটা গণমাধ্যমে বিশাল করে প্রচারিত হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, আবুল কালামের বয়স ৩৫। ২৮ বছর ধরে তিনি শরণার্থীর জীবনযাপন করছেন। তিনি এসেছেন মিয়ানমারের মংডুর বরগজবিল থেকে। তিনি প্রচুর ছবি তোলেন আর সাম্প্রতিককালে শরণার্থী জীবনকে তিনি সবসময়ই নথিভুক্ত করেছেন। তার তোলা ছবি অনেক প্রকাশনায় সংযুক্ত হয়েছে এবং তিনি সম্প্রতি রোহিঙ্গা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় দুটি পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন। তিনি বিবাহিত এবং চার সন্তানের জনক। তার দুটি শিশু খুবই ছোট।
আবুল কালামকে অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সিআর আবরার, বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. আম্বিয়া পারভীন, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল লিবারেল স্টাডিজের অধ্যাপক দীনা এম সিদ্দিকী, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন পারভীন হক ও কাউন্সিল অব ইউরোপের গুডউইল কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত বিয়াঙ্কা জাগের প্রমুখ।
Comments