যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু: গত বছরের চেয়ে পানি কম পদ্মায়
ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ভারতীয় দলের পর্যবেক্ষণে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম পানি প্রবাহ পাওয়া গেছে।
শুষ্ক মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়। প্রাপ্য পানি নিশ্চিত করতে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্টে এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে।
পদ্মার পানি পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপের জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি দল শনিবার সকাল থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আড়াই হাজার ফুট উজানে পানি পরিমাপ শুরু করেন। এই দলে রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের উপপরিচালক শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর এবং কমিশনের সহকারী পরিচালক শ্রী নগেন্দ্র কুমার। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইড্রোলজি বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পরিমাপের প্রথম দিনে আমরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় ৮০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ পেয়েছি। অথচ গত বছর একই সময়ে পদ্মায় পানি ছিল ১ লাখ ২ হাজার কিউসেক। এ বছর ২২ থেকে ২৩ হাজার কিউসেক কম পানি প্রবাহ রয়েছে।
তবে প্রবাহ কম থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে এমনটাই দাবি করেছে পানি পরিমাপের কাজে যুক্ত কর্মকর্তারা।
রইচ উদ্দিন বলেন, গঙ্গায় পানি প্রবাহ কম থাকায় পদ্মাতেও প্রবাহ কম থাকতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে কি না সেটা যৌথ নদী পর্যবেক্ষক দলের সংগ্রহ করা উপাত্ত পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়া যাবে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ৬৭ হাজার ৬৫০ কিউসেকের চেয়ে বেশি পানি নদীতে থাকায় দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে তিনি মনে করছেন।
অপরদিকে ভারতে চার সদস্যের বাংলাদেশি পানি পর্যবেক্ষক দল ফারাক্কার দুটি পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুদ্দিন। প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর দুই পর্যবেক্ষক দলের উপাত্ত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত হিসাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়। প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে।
দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। এবং তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকা গত বছরের পানি প্রবাহের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় পানি ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার কিউসেক, বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬০ হাজার ৬১ কিউসেক এবং ভারতের প্রাপ্ত হিস্যা ছিল ৪০ হাজার কিউসেক। এ সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৫৭৪ কিউসেক।
Comments