এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার চার্জ গঠন ১০ জানুয়ারি
সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় আজ রোববার চার্জ গঠনের নির্ধারিত তারিখ থাকলেও আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা পিছিয়ে ১০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছেন আদালত।
ধর্ষণ মামলার অভিযোগ নিয়ে আপত্তি (নারাজি) জানাতে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক এক সপ্তাহের সময় দেন বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাশিদা সাইদা খানম।
আজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন মামলার অভিযুক্ত আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। আদালত তা নামঞ্জুর করে দিয়েছেন।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আবুল কাশেম আদালতে ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত সাইফুর রহমানকে প্রধান করে ছয় জনের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণে জড়িত থাকা এবং অপর দুই জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া সরাসরি জড়িত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের সবাইকে আজ আদালতে হাজির করা হয়।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। কলেজের গেট থেকে স্বামীসহ তাকে ধরে ছাত্রাবাসে এনে স্বামীকে বেঁধে নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
সে রাতে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদি হয়ে ছয় জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪জনকে আসামি করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন: সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম।
তাদের সঙ্গে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে সবাই ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন।
গ্রেপ্তারকৃত সবার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডির বিশেষায়িত ল্যাবে পাঠানো হলে ডিএনএ প্রতিবেদন গত ৩০ নভেম্বর আদালতের কাছে পৌঁছায়।
সংঘবদ্ধ এ ধর্ষণে ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মহি উদ্দিন শামিমের বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন কলেজ অধ্যক্ষের কাছে জমা দিয়েছে। তবে তা প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়াও, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি তদন্ত শেষে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসানের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এমসি কলেজ থেকে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সেই রাতে ছাত্রবাসে সাইফুর রহমানের দখলে থাকা একটি কক্ষ থেকে বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করেছে।
এ মামলায় সাইফুর রহমান ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে অভিযুক্ত করে একই আদালতে পৃথক একটি চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
Comments