অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আধুনিকায়ন করে চালুর দাবি

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ৪ জানুয়ারি ২০২১। ছবি: সংগৃহীত

অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করে চালুর দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ।

আজ সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, দেশ ও বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করে চালু করতে হবে।

চাহিদা পূরণ ও রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া হলে তা কর্মসংস্থান, শিল্প, অর্থনীতি ও জাতির জন্য আত্মঘাতি হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘করোনা মহামারির ফলে বিশ্বে সৃষ্ট পরিস্থিতি পরিবেশসম্মত পণ্য ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।’

‘এর আলোকে পরিবেশ বিপর্যয় কমাতে উন্নত দেশগুলোতে ২০২২ সাল থেকে পাট ও তুলা জাতীয় পণ্যের ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘এর ফলে বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের বিপুল চাহিদার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’

তার মতে, সারা পৃথিবীতে পাটপণ্যের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারত পাট ও পাটপণ্য উৎপাদনকারী প্রধানতম দুটি দেশ। উল্লেখ্য, ভারতের পাটপণ্য উৎপাদন ১৬ লাখ মেট্রিক টন থেকে কমে ১১ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করার সামর্থ্য নেই।

‘তাই এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের দ্রুত বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু, এ সময় সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিল। পাটশিল্প নিয়ে পূর্বাপর ভাবনা চিন্তা, গবেষণা, সার্ভে না করে সরকার সমর্থক কতগুলো ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ও আমলাদের পরামর্শে আকস্মিকভাবে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়,’ যোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল বাংলাদেশের একমাত্র পাটকল। এখন ১৬ হাজার তাঁতের মধ্যে চালু রয়েছে ৪ হাজার ৮১২টি। এর উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন।

তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হয়েছে (বিজেএমও + বিজিএমসি কর্তৃক) সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ দেশের চাহিদা ও রপ্তানি মিলিয়ে এখনকারই চাহিদা পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য অন্তত দেড় লাখ মেট্রিক টন পাটপণ্য প্রয়োজন।

এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে এন্টি-ডাম্পিং প্রথা প্রত্যাহার করে ভারতের বাজার ধরতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরিষদ জানিয়েছে, এতে অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন পাট পণ্যের বাজার পাওয়া যাবে।

সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ৩ লাখ মেট্রিক টন রয়েছে। এটি আরও বাড়বে। সব মিলিয়ে এখনই আমাদের ৯ লাখ মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার।’

‘পাটপণ্য ও সুতা মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নতুন করে দেড় লাখ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘দেশে পাটপণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে রপ্তানির বিশাল সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। সম্ভব শিল্প ও জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করা।’

পাট শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে ও রপ্তানি পণ্য তৈরি করতে বাস্তব সম্মত নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘এই কাজে ব্যর্থ হলে দেশের চাহিদা ও রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। এটি হাতছাড়া হলে তা দেশের পাট, পাটশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের কর্মহীন করে দিবে। দেশের শিল্প, অর্থনীতি ও জাতির জন্য তা আত্মঘাতি হবে।’

সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আধুনিকায়ন করে পাটকল চালুর সুপারিশ করায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে পাটকল চালুর বিষয়ে দুটি প্রস্তাব তুলে ধরে বলা হয়, চীনের সরকার প্রস্তাবিত এমওইউ’র ভিত্তিতে পাটকল আধুনিকায়ন ও চালু করা এবং শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) প্রস্তাবিত ১,২০০ কোটি টাকা খরচে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আধুনিকায়ন করে চালু করার মধ্য দিয়ে ৭৫ হাজার শ্রমিকের চাকরি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, অবিলম্বে আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু করুন এবং ২০১৮ সালে অধিগ্রহণকৃত ছয়টি পাটকল ও সাতটি বস্ত্রকল আধুনিকায়ন করে চালু করুন।

এছাড়াও, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ও অধিগ্রহণকৃত পাটকল ও সুতাকল শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh races to expand air cargo capacity

In a first move to address the shortfall, Sylhet's Osmani International Airport is set to launch dedicated cargo operations today

8h ago