কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে দেশি মাছের আকাল

ছবি: স্টার

নদ-নদী ও খাল-বিলে ভরা দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি নির্ভরশীল জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে দেশি মাছের চরম আকাল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনেক দেশি প্রজাতি মাছ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। সেসব দেশি মাছ সংরক্ষণে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

মৎস্য বিভাগ সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, রংপুর অঞ্চলে ১০৮ ধরনের দেশি প্রজাতি মাছ রয়েছে। এসব মাছের নামে রচিত হয়েছে এ অঞ্চলের মনমতানো ভাওয়াইয়া গান। বর্তমানে নদ-নদী ও খাল-বিলে ৪০ থেকে ৪৫ প্রজাতি দেশি  মাছের দেখা মিললেও বাকি সব প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা টগরহাট এলাকার কৃষক সুধারাম চন্দ্র সেন (৭৮) ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘দেড় যুগ আগেও নদ-নদী ও খাল-বিলে অনেক দেশি প্রজাতি মাছ পাওয়া যেত। হাট-বাজার থেকে সে সব দেশি মাছ কিনতে পারতাম। কিন্তু, এখন অনেক দেশি মাছ চোখেই পড়ে না।’

‘আমি নিজেই অনেক দেশি মাছের নাম জানি। কিন্তু, সেগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘বর্তমানে যে কয়টি দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে ধীরে ধীরে সেগুলোরও বিলুপ্তি ঘটছে।’

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ এলাকার কৃষক আফসার আলী দেওয়ানী (৮০) ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘দেশি মাছ দেখার ইচ্ছা হয়। কিন্তু, তা পাওয়া এখন কষ্টকর। নদ-নদী উম্মুক্ত থাকলেও খাল-বিলগুলো উম্মুক্ত নেই। এসব খাল-বিলে আগে দেশি মাছের বিচরণ ছিল। এখন সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় দেশি মাছের প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘দেশে কারেন্ট জাল বের হওয়ার পর থেকেই দেশি মাছের ওপর আক্রমণ বেড়ে গেছে। এ জাল দিয়ে গ্রামের মানুষ ও মৎস্যজীবীরা মাছের পোনা অবাধে শিকার করে থাকেন। এ কারণে দেশি প্রজাতি মাছের বিলুপ্তি ঘটছে।’

তিনি মনে করেন, কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট মাছ শিকার বন্ধ হলে এখনো যে সংখ্যক দেশি প্রজাতির মাছ আছে সেগুলো সংরক্ষণ করা যাবে।

‘জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘লোকজন সচেতন না হলে কারেন্ট জালের ব্যবহার কমবে না।’

‘মৎস্য বিভাগ থেকে বড় বড় বিলে মাছের অভয়ারণ্য করে ১০ থেকে ১২ প্রজাতির দেশি মাছের সংরক্ষণ করতে পারছি। মাঝেমধ্যে মাছের অভয়ারণ্যগুলোও হুমকিতে পড়ে যায়,’ যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কুলাঘাট এলাকার মৎস্যজীবী রমেশ চন্দ্র দাস (৪৮) ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, মৎসজীবীদের তুলনায় গ্রামের মানুষই কারেন্ট জাল বেশি ব্যবহার করে থাকেন। এ জাল দিয়ে অনেক মাছ ধরা যায়।

তিনি মনে করেন, খাল-বিল ইজারা দেওয়া বন্ধ করে উম্মুক্ত রাখা হলে কারেন্ট জালের ব্যবহারও কমবে।

একই গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম (৫৬) ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, বিশেষ করে বর্ষাকালে পোনা মাছ অবাধে শিকার করা হয়। সেসময় পোনা মাছ শিকার না করলে দেশি প্রজাতির মাছের বিচরণ ও প্রজনন অনেক বেড়ে যাবে।

দেশি মাছ সংরক্ষণে তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ দেখা যায় না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ ও মৎস্যজীবীরা সচেতন না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশি প্রজাতির মাছ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

দেশি মাছ সংরক্ষেণ ও রক্ষার জন্য সরকার জনসচেতনা বৃদ্ধিতে গ্রামে-গ্রামে প্রচারণা চালিয়ে আসছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English
sirens sound in israel after iran missile attack

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

14h ago