মুক্তা চাষে সফল সুজন

এক সময়ের বেকার যুবক সুজন হাওলাদার (৩০) এখন একজন সফল মুক্তা চাষি। বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট পুকুরে মুক্তা চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। আর এখন তিনটি পতিত পুকুরে মুক্তা চাষ করেছেন। সুজন এখন এলাকায় পরিচিত মুক্তা চাষি নামে।
মুক্তা চাষি সুজন হাওলাদার। ছবি: স্টার

এক সময়ের বেকার যুবক সুজন হাওলাদার (৩০) এখন একজন সফল মুক্তা চাষি। বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট পুকুরে মুক্তা চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। আর এখন তিনটি পতিত পুকুরে মুক্তা চাষ করেছেন। সুজন এখন এলাকায় পরিচিত মুক্তা চাষি নামে।

লেখাপড়ায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোননি সুজন। ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরি কোনোটাই ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু, মুক্তা চাষ করে সুজন এখন স্বাবলম্বী। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইউটিউবে মুক্তা চাষের ভিডিও দেখেছিলেন তিনি। তখন থেকেই তার মুক্তা চাষে আগ্রহ জন্মে এবং মুক্তা চাষ শুরু করেন।

ইউটিউবে দেখা ভিডিওটি ছিল লালমনিরহাটের আদিতমারীর বালাপুকুর গ্রামের মুক্তা চাষি রুহুল আমিনের। সুজন তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করেন। মুক্তা চাষে সুজনের আগ্রহ দেখে রুহুল আমিন তার বাড়িতে এসে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যান।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুজন তার পুকুরে পুলুট (ভাসা) দিয়ে জালের প্যাকেটে ঝিনুক রেখেছেন, পুকুরে ছিটানো হচ্ছে গোবর।

সুজন জানান, তার বাড়ির পাশে একটি পতিত পুকুর ছিল। ৩০ শতাংশের সেই পুকুরটিতে প্রথম তিনি মুক্তা চাষ শুরু করেন। প্রথমে চুনা দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার পর এলাকার খাল-বিল থেকে স্বাদু পানির ৭০০ ঝিনুক সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন তিনি। এই ঝিনুকের মধ্যে তিনি অস্ত্রোপচার করে ইমেজ প্রতিস্থাপন করে বিশেষ পদ্ধতিতে পানিতে রেখে দেন। মুক্তা চাষের জন্য অস্ত্রোপচার অনেকটা সূচি কাটার মতো। ঘরে বসে যেমন কাপড় সেলাই করা যায় অনেকটা তেমন।

ঝিনুকের অস্ত্রোপচারও ঘরে বসেই করা যায়। অস্ত্রোপচারের পর জালের প্যাকেটে নয়টি করে ঝিনুক রেখে পুকুরে পুলুট (ভাসা) দিয়ে তিন ফুট দূরত্বে পুকুরের পানিতে রেখে দেন।

সুজন আরও জানান, তিনি দুই ধরনের মুক্তার চাষ করছেন। একটি ইমেজ পদ্ধতিতে ডিজাইন মুক্তা এবং অপরটি গোল মুক্তা। নয় মাসে ডিজাইন মুক্তা পাওয়া যায় এবং গোল মুক্তা পেতে প্রায় আড়াই বছর লেগে যায়। ঝিনুককে শুধু গোবর ছাড়া বাড়তি খাবার দিতে হয় না। ঝিনুক নিজে থেকেই খাবার খায়। উল্টো পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী রাখে ঝিনুক।

প্রথম বছর ঝিনুক চাষ করতে গিয়ে খরচ বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি। কারণ, তিনি লালমনিরহাট থেকে প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরে পুকুর তৈরি, ঝিনুক সংগ্রহসহ মুক্তা চাষে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। নয় মাস পর সাতশ ঝিনুক থেকে চারশটি ডিজাইন ইমেজের মুক্তা আহরণ করে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এ বছরও তিনি একই পরিমাণ আয় করতে পারবেন বলে জানান।

সুজন বর্তমানে তিনটি পুকুরে মুক্তা চাষ করছেন। তিন পুকুরে আট হাজার ঝিনুক আছে। সুজনের দেখাদেখি গ্রামের অনেক যুবকই মুক্তা চাষে আগ্রহী হলেও বাজার তৈরি না হওয়ায় মুক্তা চাষ বাড়ছে না। ডিজাইন মুক্তার চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ভারতে। ভারতের দু-একজন ব্যবসায়ী এখানে এসেও মুক্তা কিনে নিয়ে যান।

তবে, স্থানীয়ভাবে এখনো এর বাজার গড়ে ওঠেনি। বাজারজাত না করতে পারলে মুক্তা চাষে উৎসাহ হারাবেন চাষিরা।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka stares down the barrel of water

Once widely abundant, the freshwater for Dhaka dwellers continues to deplete at a dramatic rate and may disappear far below the ground.

7h ago