সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত নূর হোসেনকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনকে অন্য একটি অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও, আরেক চাঁদাবাজির মামলায় নূর হোসেন ও তার সাত সহযোগী খালাস পেয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনকে অন্য একটি অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও, আরেক চাঁদাবাজির মামলায় নূর হোসেন ও তার সাত সহযোগী খালাস পেয়েছেন।

আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাবিনা ইয়াসমিন আসামির উপস্থিতিতে এ দুটি রায় দেন।

একই দিন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানের আদালত নূর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়েরকৃত সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন।

এর আগে সকালে নূর হোসেনকে কঠোর নিরাপত্তায় ঢাকার কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। পরে আদালতে হাজিরা শেষে পুনরায় কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর জাসমীন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘সাত খুনের পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূর হোসেনের বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দুটি বাতিল করার পরও তার আগ্নেয়াস্ত্র দুটি গুলি সহ জমা দেয়নি। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট অভিযান চালিয়ে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে এনপিপি পিস্তলটি গুলিসহ ঢাকার মালিবাগ বাজার রেল ক্রসিং থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ৩ আগস্ট পুলিশ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নূর হোসেনকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আজকে নূর হোসেনের উপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।’

চাঁদাবাজির মামলায় খালাসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মূলত মামলার বাদী আকরাম হোসেন আদালতে আপোষ সাক্ষী দিয়েছেন। এজন্য আসামিরা খালাস পেয়েছেন।’

এই খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- নূর হোসেন, তার ভাই নূর উদ্দিন, সামসুল আলম, ফজলুল হক ভূঁইয়া, আলী মোহাম্মদ, হুমায়ন কবির, শাহজাহান, আব্দুর রাজ্জাক।

দুদকের পিপি মো. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দকৃত সাড়ে চার লাখ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন ব্যুরোর তদন্তে প্রমাণিত হলে পরিদর্শক ঋত্বিকা সাহা ২০০২ সালের ২৮ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন ২০১১ সালের ১৯ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি দেরিতে দায়ের করা হয়েছে এ কারণে নারায়ণগঞ্জের বিশেষ জজ আদালত ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আসামিকে অব্যাহতি দেন। তার অব্যাহতির আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন করেন। পরে হাইকোর্টে নূর হোসেনকে দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন এবং মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। আজ দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানের আদালত সেই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন। আদালত আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সাত খুনের পর নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেলে তার বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হয়। এছাড়া তার সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ। এছাড়াও নূর হোসেনের ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে ফেনিসিডিল উদ্ধার, বাড়িতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও একাধিক ব্যক্তির কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন সাত খুনের মামলায় অন্যতম প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট সাত খুন মামলার রায়ে নুর হোসেন এবং সাবেক র‌্যাব অধিনায়ক তারেক সাঈদসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন।

Comments