রিসাইকেলড উপকরণে এমদাদ হকের নতুন ব্র্যান্ড
দীর্ঘ বিরতির পর খ্যাতিমান ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক নিয়ে এসেছেন ‘এমদাদ’ নামের নতুন ব্র্যান্ড। তবে সেটা অনলাইন প্লাটফর্মে। এই ব্রান্ডের পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে রিসাইকেল করা সুতা।
দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাজ করছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে। তার এই পথচলার শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে, সেই সময়ের সারা জাগানো ‘বিচিত্রা’র ফ্যাশনে সংযুক্ত হওয়ার পরেই। ‘বিচিত্রা’র ফ্যাশন, বিপণন, অর্থনৈতিক প্রকল্পসহ নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠান আরডিপিতে তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর কাজ করেছেন সিল্ক সেরিকালচার চাষের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ও হ্যান্ডলুমে পরীক্ষিত সিল্ক উৎপাদন বিষয়ে।
এমদাদ হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি ১৯৯৭ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প গ্রামীণ চেকের গ্রামীণ উদ্যোগে যোগদানের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একদিকে পরীক্ষিত জুট ও সিল্ক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অন্যদিকে বিশ্ব মহলের সঙ্গে যোগ সূত্র তৈরি হয়ে যায়। সেখান থেকে সুযোগ হয় বিশ্বখ্যাত ডাচ ডিজাইনার লুজমেন ভেন্ডসেন একার, উয়িম, র্যামকো, নাথালি ও আনিতার সঙ্গে কাজ করার। প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। গ্রামীণ চেকের তাঁতে তৈরি হতে লাগল হোম-ফার্নিসিংয়ের জন্য জুট ইউনিয়ন ফেব্রিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে গ্রামীণের আকর্ষণ ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিল্ক দিয়ে নানা রকম প্রকল্প। সেই সিল্ক চলে গেল সুদূর মার্কিন মুলুকে। এইড টু আর্টিসানের সহায়তায় গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের রুথ হফ ম্যানের তত্ত্বাবধানে এরপর শুরু করলাম সিল্কের ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যম, চেক রেশম সিল্ক, জুট অ্যান্ডি। এবার কাজ শুরু হলো সিল্কের ভিন্ন মাধ্যমের টেক্সচার রেশম সিল্ক নিয়ে। যা আমাদের বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের গর্ব। সেই সিল্কের পোশাক পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার মডেল ম্যান্ডেলা, স্পেনের রানী সুফিয়া, বেলজিয়ামের রাজকুমার। তবে দুটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল সেই সিল্ক প্রোডাক্টের। ‘গ্রামীণ এট হোম’ নামে সিল্কের প্রোডাক্ট বিক্রি করা হতো উড়োজাহাজে। স্লোগান ছিল— তোমাদের একটি প্রোডাক্ট ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জের তাঁতিদের সিল্ক বুনন ও গ্রামীণ চেকের তাঁতিরা অব্যাহত রাখতে পারবে তাদের তাঁতকে। দ্বিতীয় আকর্ষণ ছিল ক্লিনটনের সফরে গ্রামীণ সিল্কের নানারকম উপঢৌকন দেওয়া ও ভিন্ন ভিন্ন গ্রামীণ চেকের সংমিশ্রণে প্যাচওয়াক কুইল্ট উপহার দেওয়া। সেই কুইল্ট ব্যাপক প্রশংসা পায় হোয়াইট হাউস থেকে।’
এমদাদ হক গ্রামীণ উদ্যোগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ১৯৯৭ সালে শুরু করেন ‘বাংলার মেলা’। দীর্ঘ ১৩ বছর ছিলেন সেখানে। সেখানে থাকাকালীন সময়ে তিনি করাচি, ইসলামাবাদ, নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত ও মাদ্রিদে এককভাবে দেশীয় তাঁত নিয়ে ফ্যাশন শো আয়োজন করেন।
পরবর্তী সময়ে শুরু হয় তার নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘এমদাদ’। তবে তার এই ব্র্যান্ড এসেছে অনলাইন মাধ্যমে, কোনো বুটিক বা শপে নয়।
নিজের নতুন ব্র্যান্ড নিয়ে এমদাদ হক বলেন, ‘পরিবেশ বান্ধব রিসাইকেলড সুতায় হাতে বানানো কাঁথাযুক্ত প্যাচওয়াক কুইল্ট রয়েছে। এছাড়াও আছে হাতে কাটা ও তাঁতে তৈরি খাদি কাপড়ের পঞ্চ এবং ছেলে-মেয়েদের খাদি ও চেক শাল রয়েছে। আরও থাকছে গামছা টাই-ডাইয়ে তৈরি ফিউশন পোশাক। জিরো ওয়েস্টেজ পরিবেশ বান্ধব পোশাক ও অন্যান্য আইটেম রয়েছে এসবের মধ্যে।’
বিয়ের পোশাক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশি ডুপিয়ান ছাড়াও থাকছে জামদানী দিয়ে বানানো আচকান। কেউ চাইলে হাতে বানানো পাগড়ি ও মেচিং হালকা ওজনের শাল বা উত্তরীও বানিয়ে দেওয়া যাবে। নকশায় থাকবে পছন্দসই কারচুপি ও এমব্রয়ডারি। তবে দাম নির্ভর করবে মেটারিয়াল ও নকশার ওপর।’
ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এমদাদ হকের ডিজাইন করা পোশাক দেশ ও দেশের বাইরে অনেক মানুষের প্রিয়। দেশের ফ্যাশনে স্বতন্ত্র ডিজাইনের পোশাক তৈরিতে তার বড় অবদান রয়েছে। তার নতুন পণ্যগুলো তিনি সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এফ-কমার্সের (@IamEmdadHoque) মাধ্যমে।
Comments